প্রতীকী ছবি।
ফাঁসির দড়ি তৈরি রাখুন! বানিয়ে ফেলুন ১৪ ডিসেম্বরের আগেই। বিহারের বক্সারের একটি জেলে এই নির্দেশ আসতেই জোর গুঞ্জন, তবে কি খুব শীঘ্রই নির্ভয়া গণধর্ষণ-খুনের দোষীদের ফাঁসি কার্যকর হবে।
নির্ভয়া-কাণ্ডের চার দোষীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। এক জন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছেন। যদিও জেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কবে-কোথায় দড়িগুলি সরবরাহ করতে হবে, তা এখনও জানানো হয়নি। কিন্তু, তার পরেই জল্পনা চরমে।
ফাঁসির দড়ি তৈরির জন্য বিখ্যাত বক্সার জেল। শেষ বার এখান থেকে দড়ি গিয়েছিল ২০১৬-১৭ সালে সাংসদ হামলায় দোষী আফজাল গুরুর ফাঁসির সময়। এ ছাড়া দেশের যেখানেই ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়, দড়ি যায় এই জেল থেকেই। এ বার সেই জেলেই ১০টি ফাঁসির দড়ি তৈরি করার নির্দেশ এসেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বক্সার জেলের সুপার বিজয় কুমার অরোরা বলেছেন, ‘‘১০টি দড়ি তৈরির রাখার জন্য জেল ডিরেক্টরেট থেকে আমরা নির্দেশিকা পেয়েছি। ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে তা সরবরাহ করতে হবে। আমরা জানি না কোথায় এই দড়ি কাজে লাগানো হবে। বক্সার জেলের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে ফাঁসির দড়ি তৈরির।’’
কী ভাবে দড়ি তৈরি হয়? কত দিন লাগে বা দামই বা কত, সে সব বিষয়েও তথ্য দিয়েছেন জেল সুপার। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত একটি দড়ি তৈরির জন্য ৫ থেকে ৬ জন লোক নিয়োগ করা হয়। ১৫২-স্ট্র্যান্ডের সরু সুতো পাকিয়ে চাহিদামতো দৈর্ঘ ও ব্যাসের দড়ি বানানো হয়। প্রতিটি দড়িতে ৭ হাজারের মতো এই রকম সুতো দরকার হয়।’’ তিনি জানিয়েছেন, এ ছাড়া দড়ির উপরের অংশ মসৃন করতে লাগে লোহা ও পিতলের সরু সুতো। ফাঁসির পরে দড়ি যাতে গলায় শক্ত ভাবে আটকে থাকে সেই কারণেই এটা করা হয়।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন: নির্ভয়া-কাণ্ডে অপরাধীদের নিজের হাতেই ফাঁসি দিতে চান নাটার ছেলে মহাদেব
কিন্তু এত অল্প সময়ে ১০টি দড়ি তৈরি করে সরবরাহ করা কি সম্ভব? সুপার বিজয় কুমার অরোরা বলেন, ‘‘আমাদের হাতে প্রচুর লোক রয়েছে যাঁরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দড়ি তৈরি করতে কোনও সমস্যা হবে না।’’ তবে এই দড়ি বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। তাতে ফাঁসি দেওয়ার পক্ষে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। আর দাম নির্ভর করে কাঁচামালের দামের উপর। শেষ বার যে দড়ি এখান থেকে দেওয়া হয়েছিল, তার দাম ছিল ১ হাজার ৭২৫ টাকা, জানিয়েছেন সুপার।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে গভীর রাতে বছর কুড়ির এক তরুণীকে চলন্ত বাসে তুলে অকথ্য নির্যাতন ও গণধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে তীব্র আলোড়ন পড়ে যায়। প্রতিবাদ চলতে থাকে। ঘটনায় ৫ অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ দেয় নিম্ন আদালত। তার মধ্যে রাম সিংহ নামে এক অভিযুক্ত জেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করে। অন্য দিকে এক দোষী অভিযুক্ত অপরাধের সময় নাবালক হওয়ায় সর্বোচ্চ তিন বছর জেল খাটার পর ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজার আর্জি জানান দোষীরা। দিল্লি হাইকোর্ট সেই আর্জি খারিজ করে। তার পর সুপ্রিম কোর্টেও খারিজ হয় একই আবেদন। এর পর দোষীদের মধ্যে এক জন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছে। তা নিয়ে অবশ্য রাষ্ট্রপতি এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।
আরও পডু়ন: ডেউচা-পাঁচামিতে হস্তক্ষেপে প্রস্তুত, বার্তা রাজ্যপালের, আরও বাড়তে পারে সংঘাত
তেলঙ্গানায় তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ ও পুড়িয়ে খুন এবং অভিযুক্তদের এনকাউন্টার, জামিন পেয়েই উন্নাওয়ের ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ ঘিরে ফের শোরগোল সারা দেশে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, নির্ভয়া-কাণ্ডে আদালত ফাঁসির সাজা দিলেও তা কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে কেন। এমন প্রেক্ষাপটে ফাঁসির দড়ি তৈরির জন্য বিখ্যাত বক্সারের জেলে একসঙ্গে ১০টি দড়ি তৈরির নির্দেশ যাওয়ায় তাই জল্পনা চরমে উঠেছে।