ডিমাপুরের পর মিজোরাম। অসমের পড়শি ওই রাজ্য থেকে বঙ্গভাষীদের তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ‘বাঙালি খেদাও’ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে সে রাজ্যের ছাত্র সংগঠন। ইতিমধ্যেই শতাধিক পরিবার মিজোরাম থেকে পালিয়ে ঢুকেছেন বরাক উপত্যকায়।
তাঁরা জানিয়েছেন, মিজো ছাত্র সংগঠন তাঁদের কাছে টাকা চাইছে। ব্যবসায়ী কোনও অ-মিজো পরিবার টাকা দিতে না পারলেই তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। মিজোরাম থেকে পালিয়ে আসা মাসুক আহমদ বলেন, ‘‘মিজো হানাদাররা আমাদের কয়েক জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক ‘শক’ও দিয়েছে। ওখানে থাকতে ভয় লাগছে। ব্যবসা করা তো সম্ভবই নয়।’’ পালিয়ে আসা লোকেদের অনেকে জানান, আইজল ও লুংলেতে অ-মিজোদের উপর সব চেয়ে বেশি নির্যাতন চলছে।
বরাকের শিলচর-করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে মিজোরামের। বরাকের অনেকেই সেখানে ব্যবসা করেন। ভারতের অঙ্গরাজ্য হলেও মিজোরামে ঢুকতে হলে বহিরাগতদের ‘ইনারলাইন পারমিট’ লাগে। তা ছাড়া অ-মিজো কেউ সেখানে যেতে পারেন না। শিলচর সোনাই রোডে মিজোরাম সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে ওই পারমিট নিতে হয়। ভাইরেন্টিতে রয়েছে মিজোরামের চেক পোস্ট। সেখানে মিজো পুলিশ কাগজপত্র পরীক্ষা করে। পারমিট ছাড়া কেউ মিজোরামে রয়েছেন কি না, তা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরীক্ষা করে পুলিশ। কিন্তু এ নিয়ে দাপট বেশি ছাত্র সংগঠন এমজেডপি (মিজো জিরলাই পল) এবং এমটিপি-র। এই দুই ছাত্র সংগঠন অ-মিজোদের বিরুদ্ধে সব সময়ই অভিযান চালায়।
মিজোরাম থেকে পালিয়ে আসা কয়েক জন জানান, ছাত্র সংগঠনগুলির দাবির পরিমাণ এতটাই বেশি যে ব্যবসায়ীদের পক্ষে তা দেওয়া সম্ভব হয় না। আপত্তি তুললে সে সব ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে যায় ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। তাদের উপর চলে অত্যাচার। টাকা না দিলে আটকে রাখে দিনের পর দিন। বাধ্য হয়ে অনেকে জিনিসপত্র বিক্রি করে দাবিমতো টাকা দিয়ে পালিয়ে আসেন।
অভিযোগ, ৭ দিনের মধ্যে অ-মিজোদের আইজলের মতো শহর ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। হুমকি মিলেছে, না হলে ডিমাপুর-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মিজোরাম থেকে শতাধিক ব্যবসায়ী পালিয়ে করিমগঞ্জে চলে এসেছেন। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে মিজোরাম থেকে পালিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘মিজোরামে ব্যবসায় জড়িত অ-মিজোরা বরাকের লোক। তাঁরা ভারতীয়। তাঁদের উপর কোনও নির্যাতন বরদাস্ত করা হবে না।’’ এ বিষয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করার কথা জানান কমলাক্ষবাবু। সাংবাদিক বৈঠকে উপ-পুরপ্রধান পার্থসারথি দাস, জেলা কংগ্রেস সম্পাদক ইন্দ্রনীল দাস, জেলা পরিষদের উপ-সভাপতি আব্দুল আজিজ, জমিয়তের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মৌলানা আব্দুল হামিদ, নদুয়া সংগঠনের সম্পাদক এ কে এম ফয়জুল হক, বজলুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে, মিজোরামের পরিস্থিতি নিয়ে করিমগঞ্জের জেলাশাসক সঞ্জীব গোঁহাই বরুয়ার মাধ্যমে একটি স্মারকপত্র অসমের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।