রাহুলের নির্দেশে কংগ্রেস নেতারা বাজেট পেশের আগেই হল্লা করলেন, বাজেট ‘লিক’ হয়েছে বলে। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীকে হাড়ে হাড়ে চেনেন রাহুল গাঁধী। জানতেন, ‘হাউ ইজ দ্য জোশ’ বলে প্রধানমন্ত্রী আজ বড় কাণ্ড ঘটাতে চাইবেন বাজেটের সময়। দলকে আগেই তৈরি রেখেছিলেন। সাংসদদের হাতে প্ল্যাকার্ড তুলে দিয়েছিলেন: ‘হাউ ইজ দ্য জবস’। সঙ্গে নোট বাতিলের পর ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ বেকারত্বের খবরের প্রতিলিপি।
হলও তাই। বাজেটে বলিউডের ঘোষণার সময় মোদীর পাশে বসা রাজনাথ সিংহ ইশারা করলেন পীযূষ গয়ালকে— ‘উরি, উরি’। পীযূষ যেই না ‘উরি’র কথা তুললেন, বিজেপি শিবির মুখর ‘হাউ ইজ দ্য জোশ?’ রাহুলের সেনাপতিরাও প্ল্যাকার্ড তুললেন, ‘হাউ ইজ দ্য জবস?’। নিজের দলের সাংসদ রাজীব সতাবকে পাঠালেন মোদীর কাছে। রাজীবও রেকর্ড বেকারত্বের খবরের একটি বড় রঙিন কাগজ তুলে দিলেন পীযূষকে। আর একটি ছোট্ট সাদা-কালো প্রতিলিপি মোদীকে।
এর আগে লোকসভাতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন রাহুল। তার পর থেকে মোদী আর চোখে চোখ মেলান না— রাহুলই একাধিক বার বলেছেন তা। এ বারেও রাহুলের প্রতিনিধিকে আসতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজীব প্রধানমন্ত্রীর হাতের কাছে প্রতিলিপি রেখে নমস্কার করে ফেরত গেলেন। পিছন থেকে ছুটে এসে মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান কাগজটি মুড়িয়ে ফেলে দিলেন। রাহুলের নির্দেশে কংগ্রেস নেতারা বাজেট পেশের আগেই হল্লা করলেন, বাজেট ‘লিক’ হয়েছে বলে। প্রশ্ন তুললেন, ‘‘আজ কি পাব ১৫ লক্ষ টাকা?’’ তার পর যখনই পীযূষ নোটবন্দি, জিএসটি, রোজগারের কথা বলেছেন, রে-রে করে উঠেছেন কংগ্রেস সাংসদেরা। বিজেপির শরিক নেতা রামদাস আঠওয়ালে বললেন, ‘‘রাহুলজি শুনুন’’। রাহুল পরোয়া করেননি।
কিন্তু যখন পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড়ের কথা ঘোষণা হল, বিজেপি শিবির ‘মোদী-মোদী’ করতেই যেন একটু দমে গেল কংগ্রেস। পরে দলের এক নেতা কবুল করেন, ‘‘আসলে বিজেপি নেতারাও সে সময় না-বুঝে টেবিল চাপড়েছেন মোদীর সঙ্গে। কংগ্রেসও প্রথম দফায় বুঝতে পারেনি, আসলে সেটি নিয়েও ধোঁকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বুঝেছি, পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সকলের ছাড় হলে ১৮ হাজার কোটি টাকা নয়, দরকার ৬৫ হাজার কোটির মতো। দু’-এক দিনেই মানুষের বিভ্রান্তি কাটবে।’’
রাহুল বিকেলে একুশটি দলকে একজোট করে বলেছেন, ‘‘১৫ জন শিল্পপতির সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছাড় দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী, কৃষকদের ঋণ মাফ নয় কেন?’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও বলেন, ‘‘ভোটে কৃষক-মধ্যবিত্তের উপরে প্রভাব ফেলতে ভোট বাজেট।’’ চিদম্বরম মনে করিয়ে দেন, ‘‘সব লোককে একসঙ্গে ধোঁকা দেওয়া যায় না, তিন রাজ্যের ফলেই তা স্পষ্ট। গরিবদের সুরাহা রাহুল গাঁধীই দেবেন।’’ তা হলে মোদী যে আজ এত উৎসবে মাতলেন? চিদম্বরমের জবাব, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান তৈরি। অপেক্ষা করুন, সকলের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা আসছে।’’