অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।
এক দিকে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি, অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মনধন। একটি প্রকল্পে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ঢুকবে টাকা, অন্যটিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য চালু হবে পেনশন। এই দুটি প্রকল্পই বুঝিয়ে দিল এই বাজেট, প্রাক নির্বাচনী বাজেট এবং তার লক্ষ্য গ্রামীণ ভারত এবং শ্রমজীবী ভারত।
বৃহস্পতিবার সংসদে পীযূষ গয়ালের বাজেট পেশের সময় বারেবারেই ঘুরে ফিরে আসে দেশের কৃষক এবং শ্রমিক সমাজ। সদ্যসমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষক এবং শ্রমিকের আস্থা অর্জন করতে না পারার ফল মিলেছে হাতেনাতে। তথাকথিত সুরক্ষিত হিন্দি বলয়েও সেই অসন্তোষের আঁচ প্রভাব ফেলেছে বিজেপির ভোটবাক্সে। অন্য দিকে ক্ষমতায় আসার পরই একের পর এক রাজ্যে কৃষিঋণ মকুবের রাস্তায় হেঁটে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস। এই জোড়া অস্ত্রের মোকাবিলায় মোদী সরকার হাতিয়ার করল অন্তর্বর্তী বাজেটকেই।
কখনও হরিয়ানা, কখনও দিল্লি, কখনও তামিলনাড়ু, কখনও মহারাষ্ট্র। নিজেদের দাবি আদায়ে গত কয়েক বছরে বারবার রাস্তায় নেমেছেন দেশের কৃষকেরা। সেই দাবিই যেন কথা বলল মোদী সরকারের শেষ বাজেটে। প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পে সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার কথা বলা হল পীযূষ গয়ালের বাজেটে। যে কৃষকদের জমি ২ হেক্টরের কম, এখন থেকে তাঁরা পাবেন মাসিক ৫০০ টাকা, অর্থাত্ বছরে মিলবে ৬,০০০টাকা। এই প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ মোট ৭৫,০০০ কোটি টাকা। খুব তাড়াতাড়িই অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা শুরু হয়ে যাবে বলে বাজেট পেশের সময় জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী। এই প্রকল্পের পুরো টাকাই দেবে কেন্দ্র এবং দেশের ১২ কোটি কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বরাদ্দ ৭৫,০০০ কোটির মধ্যে এই অর্থবর্ষেই ২০,০০০ কোটি টাকা খরচের কথাও জানানো হয়েছে এই বাজেটে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের আগেই কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকাতে কতটা তত্পর কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড়, মধ্যবিত্তের মন পেতে আরও রেহাই বাজেটে
কৃষকদের পরেই এই বাজেটে খুশি করার চেষ্টা হয়েছে শ্রমিকদের। প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মনধন প্রকল্পে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য করা হয়েছে মাসিক ৩,০০০টাকা পেনশনের ঘোষণা। এই প্রকল্পের জন্য শ্রমিকদের প্রতি মাসে দিতে হবে ১০০ টাকা, অন্য দিকে প্রতি মাসে সরকারের তরফেও দেওয়া হবে সমপরিমাণ টাকা। তা হলেই ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মসে মিলবে মাসিক ৩,০০০ টাকা পেনশন। ২০১৯-২০ সালের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশের সময় এই ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের দশ কোটি শ্রমিক এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। এই জন্য এই বাজেটেই ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে দেওয়ার পাশাপাশি এটিকে পৃথিবীর ‘সর্ববৃহত্ পেনশন প্রকল্প’ বলেওসংসদে মন্তব্য করেছেন পীযূষ গয়াল। যদিও যাঁদের মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকার কম এবং যাঁরা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, শুধু মাত্র তাঁরাই পাবেন শ্রমযোগী মনধন প্রকল্পের সুবিধা।
আরও পড়ুন: বেকারত্ব কমিয়ে দেখাতে আসছে ‘নয়া সমীক্ষা’, জানালেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা
এর পাশাপাশি শ্রমিকদের মন রাখতে করমুক্ত গ্র্যাচুইটি-র উর্দ্ধসীমাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই অন্তর্বর্তী বাজেটে। ২০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। কোনও সংস্থায় পাঁচ বছরের বেশি কাজ করলে মালিকপক্ষ এখন থেকে ৩০ লক্ষ টাকা করমুক্ত গ্র্যাটুয়িটির সুবিধা দিতে পারবেন।
এই দুটি প্রকল্প ছাড়াও অর্থমন্ত্রীর আজকের বাজেটে আরও নানা সময় ঘুরে ফিরে এসেছে দেশের কৃষক ও শ্রমিক সমাজ। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে গত অর্থবর্ষে বরাদ্দ ছিল ৫৫,০০০ কোটি টাকা। সেই বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০,০০০ কোটি টাকা। গ্রামের পরিকাঠামোর উন্নতি করতে গ্রাম সড়ক যোজনায় বরাদ্দ করা হয়েছে ১৯,০০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কোনও চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁদের নেওয়া কৃষিঋণে ২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাজেটে উপস্থিত আছেন পশুপালক এবং মত্স্যজীবীরাও। তাঁদেরকেও সুদে ২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে অন্তর্বতী বাজেটে।
গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)