আরও ধাক্কা।
ব্রিকসে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু আগ বাড়িয়ে খেলার সেই রণকৌশল নিয়ে আখেরে যে কোনও লাভ হয়নি, বারবার তা সামনে চলে আসছে। চিন, আমেরিকার পরে ব্রিটেনও জানিয়ে দিল, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের জন্মদাত্রী আখ্যা দিয়ে মোদীর সুরে সুর মেলাতে রাজি নয় তারা। এমনকী, বেজিংয়ের সুরেই লন্ডনের ব্যাখ্যা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘উল্লেখযোগ্য ত্যাগস্বীকার’ করেছে ইসলামাবাদ।
নয়াদিল্লির জন্য আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকে আসা এই চরম অস্বস্তির মধ্যেই বিশ্বের মুসলিম দেশগুলির সামনে ভারতকে পাল্টা আক্রমণ করতে নেমে পড়েছে ইসলামাবাদ। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর অন্তর্ভূক্ত ৫৭টি দেশের মঞ্চে কাশ্মীর ও সিন্ধু চুক্তিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে ঝড় তুলতে চাইছে পাকিস্তান। উজবেকিস্তানে ওআইসি-র বৈঠক চলছে। সেখানে নওয়াজ শরিফের প্রতিনিধি তারিক ফতেমির অভিযোগ, যে নয়াদিল্লি এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে সিন্ধুনদের জলকে ব্যবহার করতে চাইছে। ভারত আন্তর্জাতিক চুক্তিকে নস্যাৎ করেছে বলে দাবি পাকিস্তানের। মুসলিম দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের এই সম্মেলনে ইসলামাবাদের তরফে কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। কাশ্মীরে ভারত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে ও নাগরিকরা এর শিকার হচ্ছেন— এ সব অভিযোগ মুসলিম দেশগুলিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান।
বিশ্বের মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ ভারতে বাস করেন। তবু এই মঞ্চে ভারতকে রাখা হয়নি। কেননা, ওআইসি-র নিয়ম হল, কোনও দেশ যদি ওআইসি-র সদস্য দেশের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে থাকে, তা হলে ওই মঞ্চের সদস্য হওয়া যায় না। তাই অতীতে সৌদি আরব, জর্ডন কিংবা ইরানের মতো দেশগুলি ভারতকে এই মঞ্চে রাখতে চাইলেও পাকিস্তানের আপত্তিতে তা সফল হয়ে ওঠেনি। আক্রমণ শানাতে এখন ভারতের অনুপস্থিতির সেই সুযোগকেই ব্যবহার করছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের জন্মদাত্রী হিসেবে তুলে ধরতে মোদী আহ্বানে সাড়া দেয়নি বেজিং। বরং তাদের বক্তব্য ছিল, পাকিস্তান নিজেই জঙ্গি হামলার শিকার। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে, এবং এ জন্য অনেক মূল্যও দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল যাতে ইসলামাবাদের সেই ‘ত্যাগ’-কে সম্মান করে, তা নিয়ে সওয়াল করেছিল চিন। নয়াদিল্লি এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এ বার সন্ত্রাসে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়াতেও বেজিংয়ের সুরই ফিরে এল। পাকিস্তান জঙ্গিদের জন্য স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে এবং ভারতে তারা জঙ্গি কার্যকলাপ চালাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের উচিত এর কড়া নিন্দা করা— এই মর্মে একটি আবেদন জমা পড়েছিল ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে। এতে সই করেছেন প্রায় ২০ হাজার জন। ফলে সরকারকে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে। ব্রিটেনের ব্যাখ্যা, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে ব্রিটেন ও পাকিস্তানের একই রকম স্বার্থ রয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে আমরা দায়বদ্ধ।’’ এখানেই শেষ নয়। ব্রিটেন বলেছে, ‘‘সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে পাকিস্তান ও সে দেশের মানুষ যে ত্যাগস্বীকার করছে, আমরা তা স্বীকার করি।’’ এমনকী, পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মোকাবিলায় সে দেশের সরকার কাজ করছে, এমন কথাও তুলে ধরেছে ব্রিটেন। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আগামী ৬ নভেম্বর থেকে তিন দিনের ভারত সফরে আসছেন। এর আগে ব্রিটেনের এই অবস্থান নয়াদিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে।
তবে এর মধ্যেই দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনার দরজাও খুলে রাখতে চাইছে মোদী সরকার। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, পাকিস্তানের উপর চাপ বজায় থাকবে। কিন্তু আলোচনার সম্ভাবনাকেও খতিয়ে দেখা হবে। সংসদীয় কমিটির সামনে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় গত কাল বিদেশসচিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আবার কথাবার্তা শুরু করবে কিনা ভারত। বিষয়টিকে উড়িয়ে না দিয়ে তাৎপযপূর্ণ ভাবে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে আগেও কথাবার্তা বলেছি। ভবিষ্যতেও আলাপ আলোচনা করা হবে। তবে কবে কথা হবে, তার কোনও তারিখ নেই।’’