জেড্ডা থেকে ফেরান, টুইট বিদেশমন্ত্রীকে

মন্ত্রীর উদ্দেশে আবেদন বলে কথা। সৌদি আরবের রিয়াধে ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন সুহেল আজাজ খান সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা টুইটে তরুণের ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চাইলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০১:২১
Share:

দায়িত্ব নিয়ে নতুন বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শংকর সদ্য টুইট করে জানিয়েছেন, ‘সুষমা স্বরাজের উত্তরসূরি হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি কৃতার্থ।’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে পোস্ট হল একটি ভিডিয়ো। কাঁদতে কাঁদতে এক তরুণ জানাচ্ছেন, খুব খারাপ অবস্থায় তিনি জেড্ডায় আটকে রয়েছেন। এখনই বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু তাঁকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। করুণ আর্জি, ‘মন্ত্রীমশাই দয়া করে কিছু করুন, না হলে আমি পাগল হয়ে যাব!’ তরুণের টুইট হ্যান্ডল বলছে নাম মানিক চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

মন্ত্রীর উদ্দেশে আবেদন বলে কথা। সৌদি আরবের রিয়াধে ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন সুহেল আজাজ খান সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা টুইটে তরুণের ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চাইলেন। আশ্বাস দিলেন, ‘ভেবো না, দূতাবাস তোমার সঙ্গে আছে।’ মানিক তাঁর হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর দিলেন। এ বার পাল্টা টুইট রিয়াধের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে— ‘আপনার এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। অন্য কোনও নম্বর থাকলে দিন।’

মানিকের দুর্দশার কাহিনি শুনে তখন পর পর টুইট। ‘ভারতীয় দুতাবাস দয়া করে ওঁকে সাহায্য করুন!’ কেউ বা লিখেছেন, ‘ওই নম্বরের হোয়াট্সঅ্যাপ তো দিব্যি কাজ করছে। আপনারা কেন পাচ্ছেন না?’ দূতাবাসের এই চটজলদি তৎপরতায় নতুন মন্ত্রীও তাঁদের ধন্যবাদ দিলেন।

Advertisement

কিন্তু কে এই মানিক? তাঁর দেওয়া হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরেই পাওয়া গেল তরুণকে। বাড়ি কলকাতা সংলগ্ন একটি জেলায়। মাস খানেক আগে এজেন্টের মাধ্যমে কাজে গিয়েছেন জেড্ডার একটি রেস্তরাঁয়। কিন্তু থাকা-খাওয়ার চরম অব্যবস্থা সেখানে। বললেন, ‘‘এখানে আসার আগে এজেন্টকে বারে বারে বলেছি, ধর্মের কারণে সব ধরনের খাবার খেতে পারব না। কিন্তু এসে দেখি এখানে কর্মীদের জন্য সেই খাবারই শুধু বরাদ্দ। আর কিচ্ছুটি মেলে না।’’ মানিক জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি বুঝে যান এখানে কাজ করতে গেলে তাঁকে না-খেয়ে থাকতে হবে, আর সেটা বেশি দিন সম্ভব নয়। হোটেল কর্তৃপক্ষকে সেটা জানাতে তাঁরা জানান, ‘ফেরত যেতে চাইলে ১৫ হাজার দিনার দিয়ে যেতে পারো।’ মানিক বলেন, ‘‘গরিবের ছেলে। অনেক কষ্টে
টাকা-কড়ি জোগাড় করে এসেছি। আর দেওয়ার মতো টাকা আমার নেই। জেড্ডায় ভারতীয় দূতাবাসের শাখা অফিসে গিয়ে খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হল। বললাম, এ ভাবে থাকলে পাগল হয়ে যাব। আত্মহত্যা করে ফেলতে পারি। অফিসার ঠান্ডা গলায় বললেন, আপনি আত্মঘাতী হলে কারও কিছু যায় আসে না!’’

মানিক জানালেন, বাড়িতে চিন্তা করবে বলে কিছু জানাননি। কিন্তু তিনি ফিরতে মরিয়া। প্রধানমন্ত্রীকে টুইট করেছেন, বিদেশমন্ত্রীকেও করলেন। কিছু একটা উপায় এ বার নিশ্চয়ই হবে। মানিকের দাবি, এজেন্টদের মুখে কাজের সুন্দর পরিবেশের কথা শুনে অনেকেই সৌদি আরবে এসে আর ফিরতে পারছেন না। তাঁর এক সহকর্মী চার দিন জ্বরে পড়ে আছেন, কর্তৃপক্ষ ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থাও করেননি।

বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন এমন অনেককে সাহায্য করেছিলেন সুষমা স্বরাজ। অনেক সময়ে টুইট বা ফেসবুকের বার্তা দেখেও দফতরের অফিসারদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বিপন্নদের পাশে দাঁড়াতে। মানিকের আর্জি সাড়া পাওয়ার পরে এ দিনই এমন আরও বেশ কিছু টুইট জমা পড়েছে জয়শংকরের কাছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন নতুন বিদেশমন্ত্রীও। দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়া ভারতীয়দের সাহায্যের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার
জন্য অফিসারদের সতর্ক করে দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রীও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement