গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সহপাঠীরা তাকে ‘ছক্কা’ বলে উত্ত্যক্ত করত। তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত আরভে। বাড়িতে মাকে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, “মা, ওরা আমাকে ছক্কা বলে জ্বালাতন করে।” ছেলে যে স্কুলে পড়ত, সেই স্কুলেরই শিক্ষিকা আরতি মলহোত্র। তাঁর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে একাধিক বার জানিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা খুব একটা গ্রাহ্য করেননি। উল্টে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, “ও এ সব নাটক করছে।”
আরভে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত, সেই সময় থেকেই সহপাঠীরা তাকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে বলে অভিযোগ। আরতি বলেন, “আমি ছেলেকে সান্ত্বনা দিতাম, সব ঠিক হয়ে যাবে। ও ভলিবল খেলার চেষ্টা করত। কিন্তু খেলাধুলোর চেয়ে আঁকা এবং গান নিয়েই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিল। কিন্তু সহপাঠীরা তা নিয়েও কটাক্ষ করত।”
পরিস্থিতিটা আরও ভয়ানক হয় আরভে যখন নবম শ্রেণিতে ওঠে। আরভে তার মাকে জানিয়েছিল যে, ওর চোখ বেঁধে ক্লাসের মধ্যে জামাকাপড় খুলে নেয় সহপাঠীরা। আরতি বলেন, “সে দিনের ওই ঘটনার পর চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল। হাঁপাচ্ছিল। যে ঘটনার শিকার হত নিত্যদিন, সেই বিষয় নিয়েই একটি লেখা জোরে জোরে পড়ছিল। তখনই বুঝেছিলাম বড় কিছু একটা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতেই মনের ভিতরে চেপে রাখা যন্ত্রণা এক নিশ্বাসে উগরে দিল। বলেছিল, ওরা আমার চোখ বেঁধে নগ্ন করে দিয়েছিল। আমি আর এ সব নিতে পারছি না, মা!”
ছেলের মুখে ওই কথা শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আরতি। শেষ কিনা যৌন হেনস্থার শিকার হল ছেলে! আরতি বলেন, “সেই ঘটনা আরভেকে প্রবল ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। অবসাদে চলে যাচ্ছিল দিন দিন। আঁকা এবং গানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ায় তিনি জানিয়েছিলেন ছেলে ডিসলেক্সিয়াতে ভুগছে। পড়াশোনাতে ওর মন বসছিল না। এ দিকে বোর্ডের পরীক্ষাও এগিয়ে আসছিল।”
আরতি জানান, এই ঘটনার পর থেকে স্কুলে যেতে ভয় পেতে লাগল আরভে। তাঁর কথায়, “এক দিন আরভে আমাকে বলল, মা, আমি নখপালিশ এবং গয়না পরতে পছন্দ করি। বলেছিলাম, তোর যেটা ভাল লাগে তুই তাই-ই কর। ভেবেছিলাম এ কথা শুনে ও খুশি হবে। টানা ছুটির পর যখন স্কুল খুলল, আরভে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল পরীক্ষা দেবে না। আমি বলেছিলাম, থাক দিতে হবে না।”
আরতি স্কুল থেকেই আরভেকে মেসেজ করে এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই কথার কোনও জবাব আসেনি। আরতি জানান, ঘণ্টাখানেক পরেই সোসাইটি থেকে ফোন আসে। তাঁকে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসতে বলা হয়। তাঁর কথায়, “বাড়িতে পৌঁছতেই জানতে পারি আরভে ১৬ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। একটা সুইসাইড নোট আমার জন্য রেখে গিয়েছিল। ও লিখেছিল, নতুন কোনও কাজ খুঁজে নাও, মা। তুমি আমার সবচেয়ে ভাল মা।”
সেই ঘটনার পর ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। দোষীরা এখনও কোনও শাস্তি পায়নি। আর সেই সুবিচারের আশায় থানা-পুলিশ-আদালত ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরতি। ঘটনাটি হরিয়ানার ফরিদাবাদের। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে তাঁর সমস্ত অভিযোগ তুলে ধরেছেন আরতি।