প্রতীকী ছবি
টাকা তোলা বা বদল করতে হবে, অথচ ব্যাঙ্ক, এটিএম-এর সামনে লম্বা লাইন? শরীর খারাপ বা কাজের চাপে সেই লাইনে দাঁড়ানোর সময় নেই? ঘণ্টা পিছু মাত্র ৯০ টাকা দিলেই দিল্লিতে এখন লোক মিলছে লাইনে দাঁড়ানোর। আর এই বাজারে এমন সুযোগ লুফে নিচ্ছেন অনেকেই।
মানুষের সমস্যার সমাধান করেই ব্যবসার উপায় বের করেছেন দিল্লির দুই তরুণ ব্যবসায়ী। বাড়িতে ফাইফরমাশ খাটার লোক জোগানোর জন্য বছরখানেক আগে ‘বুক মাই ছোটু’ নামের একটি ‘স্টার্ট-আপ’ তৈরি করেছিলেন তাঁরা। দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফাইফরমাশ খাটার জন্য কাজে লাগানো কমবয়সী ছেলেদের ‘ছোটু’ বলে ডাকা হয়। ‘ছোটু’ বলা হলেও এদের প্রায় সকলেরই বয়স ১৮ বছরের বেশি। ‘বুক মাই ছোটু’র ক্ষেত্রে মোবাইলের অ্যাপ বা ফোনে বুক করলেই ঘর সাফাই, বাড়ি বদল, পার্টি বা অনুষ্ঠানের কাজকর্মে হাত লাগানো, বয়স্কদের দোকান-বাজার করতে সাহায্য করা বা বাজার করে দেওয়ার জন্য লোক পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন ওই সংস্থাই ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানোর জন্যও লোক পাঠাতে শুরু করেছে।
নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু দিন পর্যন্ত ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন আর কিছুতেই ছোট হচ্ছিল না। তখন গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছিলেন, কালো টাকার কারবারিরা কিছু লোককে নোট বদল করার জন্য কাজে লাগাচ্ছে। সেই লোকেরাই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঘুরে ঘুরে সারা দিন ধরে টাকা বদলের কাজ করছে। ব্যাঙ্কে অন্যের হয়ে নোট বদল বন্ধ করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার আঙুলে কালি লাগানোর দাওয়াই দিয়েছে। একবার মাত্র নোট বদল এবং আঙুলে কালি লাগানো চালু হতেই ব্যাঙ্কে লাইনও দ্রুত কমতে শুরু করেছে বলে সরকারের দাবি। তা হলে কি মোদী সরকারের দাওয়াইকে বুড়ো আঙুল দেখাতেই লোক জোগাচ্ছে ‘বুক মাই ছোটু’?
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সতজিৎ সিংহ বেদী বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেরা মোটেই ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকবে না। তারা শুধু লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে। অনেকেরই জরুরি ভিত্তিতে টাকার দরকার। কিন্তু সে সময় তিনি হয়তো অসুস্থ, বাড়িতে কেউ নেই বা কাজে ব্যস্ত। তখন আমাদের ছেলেরা লাইনে গিয়ে দাঁড়াবে। লাইন ব্যাঙ্ক বা এটিএম-এর কাছাকাছি পৌঁছলে, যাঁর অ্যাকাউন্ট তাঁকে খবর দেওয়া হবে। তিনি নিজেই এসে টাকা তুলবেন।’’
এখনও পর্যন্ত কেমন সাড়া মিলছে, তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন সতজিৎ। যদিও তাঁর অ্যাপ ব্যবহারকারী অনেকেই উচ্ছ্বসিত। সতজিতের দাবি, তাঁরাই প্রথম স্টার্ট-আপ, যাঁরা চাহিদা মতো ঘণ্টার ভিত্তিতে রোজকার সংসারের কাজে সাহায্য করার লোকের জোগান দেন। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের সমস্যা দেখেই তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তার সমাধানের এই ভাবনা মাথায় আসে তাঁদের। দিল্লি ও লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার কর্মীদের নাম নথিবদ্ধ করা থাকে সংস্থার কাছে। যেখান থেকে ‘বুকিং’ হচ্ছে, সেই এলাকার কর্মীদের কাছে খবর চলে যায়। তাঁরা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যান।
৫০০-১০০০ চাকার নোট বাতিলের পর ব্যাঙ্ক বা এটিএমে দীর্ঘ লাইন দেখে সতজিৎদের মাথায় আসে, তাঁদের পরিষেবার তালিকায় এই লাইনে দাঁড়ানোও আসতে পারে। সতজিৎ বলেন, ‘‘আমরাও কালো টাকার বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে আমরাও সরকারের পাশে রয়েছি।’’ কিন্তু এক ঘণ্টার বদলে যদি দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়? সতজিতের জবাব, ‘‘বেশি সময়ের জন্য লাইন দিতে হলে ডিসকাউন্টও মিলবে। এক ঘণ্টায় ৯০ টাকা হলেও দু’ঘণ্টার জন্য কিন্তু ১৭০ টাকা। যত লম্বা লাইন, তত ছাড়।’’