বড়োভূমির সীমানা পেরিয়ে কখনও বাইরের দুনিয়ে দেখেনি সে। ফুটবলে সকলকে অবাক করে হতদরিদ্র পরিবারের সেই কিশোরই এ বার যাচ্ছে জার্মানি!
বাবা সাফাইকর্মী। জীর্ণ একচিলতে কুঁড়েতেই সংসার। এমনই পরিবারের চন্দন বড়োর কৃতিত্বে খুশি ছড়িয়েছে তার পরিবারে। ছেলের সাফল্যে খুশি বাবা নৃপেন বড়ো।
চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া চন্দনের ফুটবল প্রতিভা দেখে মুম্বইয়ের টাটা ট্রাস্ট ও ইউ স্পোর্টস তাকে ৬ মাসের জন্য ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য জার্মানি পাঠাচ্ছে। ছেলেকে জার্মানি পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট-ভিসার ব্যবস্থা করছেন নৃপেনবাবু। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন ও বড়ো ছাত্র সংগঠন।
ভারত-ভুটান সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকা হরিশিঙার সান্ধ্য বাজারে ঝাড়ু দিয়ে সামান্য টাকা হাতে পান নৃপেনবাবু। নলবাড়ি জেলার পাগলাদিয়ার তীরে আদি বাসস্থান ছেড়ে রোজগারের আশায় উদালগুড়ি জেলার হরিশিঙায় রেললাইনের পাশে ঝুপড়ি করে থাকেন তাঁরা। স্ত্রী রীণাদেবী চায়ের দোকানে বাসন মাজেন। তাঁদের বড় ছেলে মনোজ সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে কাজের সন্ধানে বরাক উপত্যকায় পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া চন্দনের ধ্যানজ্ঞান শুধু ফুটবল। হরিশিঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র চন্দনের প্রতিভাকে সযত্নে লালন করছিলেন স্থানীয় ফুটবল প্রশিক্ষক স্যামুয়েল বসুমাতারি। হরিশিঙা ফুটবল কোচিং সেন্টারের তরফেই চন্দনের খেলার সামগ্রী যোগান দেওয়া হচ্ছিল। বিটিসি ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগ ছোটদের মধ্যে থেকে ফুটবল প্রতিভার খোঁজ করছে জানতে পেরে স্যামুয়েল চন্দন-সহ তাঁর পাঁচ ছাত্রকে নিয়ে কোকরাঝাড়ের সাই কেন্দ্রে হাজির হন। জানতে পারেন, টাটা ট্রাস্ট ও ইউ স্পোর্টস উত্তর-পূর্ব থেকে অনূর্ধ ১৫ বছরের প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন খেলোয়াড়দের বাছাই করে স্কলারশিপ দিয়ে জার্মানি পাঠাবে। চন্দনকে তাঁর ‘ক্ষিদদা’ জানান, জীবন আর মাঠের লড়াইয়ে টিঁকে থাকতে গেলেই এটাই তার শেষ সুযোগ।
১৬ জুন নির্বাচন প্রক্রিয়া চলে। প্রায় ২০০ ফুটবলারের মধ্যে স্কিল ও প্রতিভার চমকে সকলকে তাক লাগিয়ে দেয় চন্দন। জানানো হয়েছিল, নির্বাচিত কিশোরদের চিঠি দিয়ে জানানো হবে। ৭ জুলাই মুম্বই থেকে আসে সেই চিঠি। জানানো হয়, ৬ মাসের জন্য চন্দনকে জার্মানিতে আধুনিক ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নৃপেনবাবুকে ছেলের পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করতে বলা হয়।
কিন্তু দরিদ্র, নিরক্ষর নৃপেণবাবু কোনওদিন গুয়াহাটি যাননি। তাঁর কাছে পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি করা অসম্ভব ব্যাপার ছিল। ‘বিপত্তারণ’ হয়ে দাঁড়ান স্যামুয়েলবাবুই। তাঁর উদ্যোগে হরিশিঙা ফুটবল কোচিং সেন্টার ও আবসুর আঞ্চলিক সমিতি চন্দনের পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরির ভার নিয়েছে। আবসুর তরফে চন্দনের জার্মানি যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য জেলাশাসক, ক্রীড়া দফতর, বিটিসি প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আবসুর আঞ্চলিক সভাপতি নিজাউমসা বড়ো চন্দনের বাবাকে নতুন করে ঝুপড়ি তৈরি জমিও দেবেন বলে জানান।
টাটার মাইক্রোফিনান্স এ্যান্ড লাইভলিড প্রোগ্রামের তরফে জানানো হয়েছে— শুধু ফুটবল প্রশিক্ষণ নয়, চন্দনের লেখাপড়ার ভারও নেবে তারা। উদালগুড়ির জেলাশাসক সাধনা হোজাই জানান, চন্দন জেলার গর্ব। তাকে সাধ্যমতো সাহায্য করবে জেলা প্রশাসন।