Karnataka Assembly Election 2023

মোদী-শাহ যুগলের যুগেও দেশের অর্ধেক রাজ্যেই অবিজেপি সরকার! কোন রাজ্যের রং এখন কেমন?

একাধিক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গড়ার কথা বলেছিলেন। কংগ্রেস ক্রমে একটি ‘ক্ষয়িষ্ণু শক্তি’ হয়ে উঠছে বলেও কটাক্ষ উড়ে এসেছিল বিজেপি শিবির থেকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ ১৮:১২
Share:

লোকসভা ভোটের আগে মোদী-শাহের চিন্তা বাড়াল কর্নাটক। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে আরও এক বার হোঁচট খেতে হল নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের। সাম্প্রতিক অতীতে উত্তরে হিমাচল প্রদেশে থমকে গিয়েছিল বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া। এ বার বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণে, কর্নাটকেও থমকে গেল বিজেপির জয়রথ। শনিবারের পর দেশের ভোট মানচিত্রে একটু হলেও ফিকে হল গেরুয়া রং। অন্য দিকে সবুজের অস্তিত্ব আরও একটু প্রকট হল ওই মানচিত্রে। কর্নাটক জয়ের পর এখন ৪টি রাজ্যে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী রইলেন। রাজ্যগুলি হল রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, হিমাচল প্রদেশ এবং কর্নাটক। এর মধ্যে অবশ্য চলতি বছরেই নির্বাচন রয়েছে রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে। তা ছাড়াও নির্বাচন রয়েছে মধ্যপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানাতেও।

Advertisement

একাধিক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গড়ার কথা বলেছিলেন। কংগ্রেস ক্রমে একটি ‘ক্ষয়িষ্ণু শক্তি’ হয়ে উঠছে বলেও কটাক্ষ উড়ে এসেছিল বিজেপি শিবির থেকে। পদ্মশিবিরের সেই আত্মবিশ্বাসে প্রথম ঘা লাগে গত ডিসেম্বরে, হিমাচলে পরাজিত হওয়ার পর। দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে এক কর্নাটকেই ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। তাই দাক্ষিণাত্যের গড় বাঁচাতে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন মোদী-শাহরা। প্রধানমন্ত্রী নিজে তো বটেই, দফায় দফায় সভা-সমাবেশ করেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। তবে দিনের শেষে জয় অধরাই রইল বিজেপির। দক্ষিণের পাঁচ রাজ্যেই বিরোধী দলগুলির দখলে রইল।

Advertisement

কোন রাজ্য কে এখন ক্ষমতায়? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

রাজ্যওয়াড়ি ক্ষমতার বিন্যাসের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, বিজেপির ‘স্বর্ণযুগে’ও কংগ্রেস এবং কংগ্রেস সমর্থিত দলগুলি ৭টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপি বিরোধী বলে পরিচিত আঞ্চলিক দলগুলির হাতে রয়েছে ৮টি রাজ্য। পক্ষান্তরে বিজেপি একক ক্ষমতায় ৯টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপির শরিক দলগুলি ক্ষমতায় রয়েছে ৬টি রাজ্যে। পাটিগণিত বলছে, দেশের ২৮টি রাজ্য এবং দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (দিল্লি এবং পুদুচেরি) মিলিয়ে মোট ৩০টি সরকারের অর্ধেক এখন বিরোধী দলগুলির দখলে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বিজেপির শাসনাধীনে রয়েছে ১৫টি সরকার। অথচ, গত ডিসেম্বর মাসের আগে পর্যন্ত একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়ে আসছিল বিজেপি। ২০২৩ সালের পর দেশে কংগ্রেসের আর কোনও মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কার দোলাচল দেখা গিয়েছিল হাত শিবিরের অন্দরেও। গত জুন মাসে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এনসিপিকে নিয়ে তৈরি হওয়া মহাবিকাশ আঘাডী জোট সরকারের পতন ঘটে। অনুগত বিধায়কদের নিয়ে শিবসেনা ভেঙে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েন একনাথ শিন্ডে। ঘুরপথে আরও একটি রাজ্যে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ঠিক যে ভাবে ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে কমলনাথের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার গড়লেও পরে বিধায়কদের একাংশ দল বদলানোয় ক্ষমতায় আসে বিজেপি।

বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, বিজেপির নির্বাচনী সাফল্যের মোকাবিলা না করতে পারার ব্যর্থতা যদি তাদের হয়, তবে বিজেপির ‘সাম-দাম-দণ্ড-ভেদের নীতি’ দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের দুর্বলতাকেই প্রকট করেছে। তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলগুলিও বরাবর অভিযোগ করে এসেছে যে, বিজেপি আগ্রাসী নীতি নিয়ে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে কর্নাটক দখলের পর বর্তমান চিত্রটা যা দাঁড়াল, তা বিজেপির জন্য খুব একটা ‘সুখকর’ নয় বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। উত্তর ভারতের পঞ্জাব, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মেঘালয়, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় রয়েছে বিরোধী দলগুলি। দক্ষিণ ভারতেও তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, তামিলনাড়ু বিধানসভার বিরোধী আসনেই বসতে হয়েছে বিজেপিকে। এই তালিকায় নতুন স‌ংযোজন হল কর্নাটক। এখান থেকেই স্পষ্ট, কংগ্রেস তো বটেই, আঞ্চলিক দলগুলিও নিজেদের ঘাঁটিতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে।

হিমাচলের পর কর্নাটক জয়, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র প্রভাব কতটা?

ফলাফল দেখুন

ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী জেএমএম, তামিলনাড়ুতে রয়েছে ডিএমকে। বিহারে রয়েছে জেডি(ইউ), আরজেডি এবং কংগ্রেসের জোট সরকার, পঞ্জাব এবং দিল্লিতে ক্ষমতায় রয়েছে আপ। ওড়িশায় ক্ষমতায় রয়েছে বিজেডি। তেলঙ্গানায় ক্ষমতায় রয়েছে টিআরএস, অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, মিজোরামে রয়েছে এমএমএফ। কেরলে ক্ষমতায় রয়েছে বামেরা। লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে লড়াই করার ডাক দিচ্ছে। একে অপরের সঙ্গে দৌত্য চালাচ্ছেন বিরোধী নেতারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী নেতাদের কেউ কেউ বিজেপির বিরুদ্ধে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ লড়াইয়ের কথা বলছেন। সে ক্ষেত্রে যে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে যে দল শক্তিশালী, তাকেই সমর্থন জানাবে বাকি বিরোধী দলগুলি। বিরোধী দলগুলির মধ্যে কেবল বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস তাদের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে অটল রয়েছে। কিন্তু হিমাচলের পর কর্নাটকের এই ফল কংগ্রেস শিবিরকে তো বটেই, বিরোধী শিবিরকে আরও উজ্জীবিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ২০২৪-এর আগে বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া আরও গতি পেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement