দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি তাঁকে ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবদের গ্রেফতারের ছক কষেছে বলে দাবি করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তাঁর দাবি, বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করে ওই রাজ্যগুলিতে লোকসভায় ভাল ফল করার লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। প্রসঙ্গত, কেজরীওয়ালের ধাঁচেই চলতি মাসের গোড়ায় একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতাও।
আবগারি দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই জেলে গিয়েছেন দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ)-র অন্যতম শীর্ষ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া। ওই মামলায় মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালও গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কায় ভুগছেন আপ নেতৃত্ব। নিজের সম্ভাব্য গ্রেফতারি আঁচ করেই গত কাল দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কেজরীওয়াল। তিনি গ্রেফতার হলে জেল থেকেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব সামলাবেন কি না, তা দলীয় কর্মীদের কাছে জানতে চান কেজরীওয়াল। দলীয় কর্মীরা এক বাক্যে জানান, তাঁরা কেজরীওয়ালকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।
দলের নেতা-কর্মী-সাংসদ-বিধায়কদের সমর্থন পাওয়ার দিল্লির আমজনতা এ প্রসঙ্গে কী ভাবছে তা জানতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন কেজরীওয়াল। তাঁরকথায়, ‘‘আমি ক্ষমতার জন্য লালায়িত নই। অতীতে ৪৯ দিনেরমাথায় মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। এ ক্ষেত্রেও দিল্লির মানুষ যা রায় দেবেন, তা আমি মাথা পেতে নেব।’’ পাশাপাশি তিনি জেলে থাকাকালীন যদি লোকসভা নির্বাচন হয়, দিল্লির সাতটি কেন্দ্রেই বিজেপির পরাজয় পরাস্ত নিশ্চিত করতে দলীয় কর্মীদের গত কাল নির্দেশ দেন কেজরীওয়াল।
রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে শুধু তাঁদের নয়, সার্বিক ভাবে বিরোধী নেতৃত্বকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগে সরব হয়েছেন কেজরীওয়াল। তাঁর অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিজেপি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাহায্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত সোরেন ও তেজস্বী যাদবের মতো বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যাতে বিরোধী নেতৃত্বের অভাবে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও বিহারে ভাল ফল করতে পারে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতারহওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিজেপির লক্ষ্য হল একে একে সব বিরোধী নেতাদের জেলা পোরা। যাতে বিরোধীশূন্য দেশে বিনা বাধায় জিতে আসতে সক্ষম হয় বিজেপি।
আপ নেতৃত্বের মতে, বিজেপি বুঝতে পারছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দশ বছরের শাসনে দেশে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া প্রবল। উল্টো দিকে, সময় যত গড়াচ্ছে তত শক্তিশালী হয়ে উঠছে বিরোধী দলগুলি। তাই বিরোধী দলগুলির মনোবল ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যেই ওই দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বকে গ্রেফতারের ছক কষছে বিজেপি। আপ নেতৃত্বের দাবি, কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি কার্যত সময়ের অপেক্ষা। আজ না হয় কাল ওই গ্রেফতারি হবেই।
কেজরীওয়ালের ওই অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি বলেন, ‘‘অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। আর কেজরীওয়াল যদি নির্দোষ হন তা হলে অহেতুক ভয় পাচ্ছেন কেন?কেন জেলে যেতে হবে কাঁদুনি গাইছেন। আসলে তিনি জানেন, আবগারি দুর্নীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে তিনি জড়িত রয়েছেন।’’