Eknath Shinde - Devendra Fadnavis

ফডণবীসের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় শিন্ডে! মহারাষ্ট্রে সরকারি বিজ্ঞাপন ঘিরে সংঘাত বিজেপি-সেনার

শিন্ডেসেনার হিন্দি বলয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা তাদের সহযোগী বিজেপিকে অসুবিধায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

মুম্বই শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩ ২১:৫২
Share:

দেবেন্দ্র ফডণবীস ও একনাথ শিন্ডে। — ফাইল চিত্র

দুই শরিকের টানাপড়েন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এ বার মহারাষ্ট্র সরকারের একটি বিজ্ঞাপন ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার সঙ্গে সহযোগী বিজেপির মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এল।

Advertisement

বিভিন্ন সংবাদপত্রে মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপনের শিরোনাম, ‘ভারতের জন্য মোদী, মহারাষ্ট্রের জন্য শিন্ডে’। সেখানে বর্তমান মরাঠা রাজনীতির ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা’ বলা হয়েছে শিন্ডেকে। আর সেখানেই আপত্তি বিজেপির। পদ্ম-শিবিরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে নন সে রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা জোট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। প্রসঙ্গত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্রকে সামনে রেখেই ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটে লড়েছিল বিজেপি। সেই ভোটে মরাঠি ভাষায় স্লোগান তুলেছিল, ‘দেশত নরেন্দ্র, রাজ্য দেবেন্দ্র (দেশের জন্য নরেন্দ্র, রাজ্যের জন্য দেবেন্দ্র)। সেই স্লোগানকে অনুকরণ করে শিন্ডের নামে বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওই বিজ্ঞাপনে প্রকাশিত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্রের ২৬.১ শতাংশ নাগরিক মুখ্যমন্ত্রী পদে শিন্ডেকে পছন্দ করছেন। ২৬.১ শতাংশের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস। ওই বিজ্ঞাপনে ক্ষুব্ধ মহারাষ্ট্র বিজেপির সভাপতি চন্দ্রশেখর বাওনকুলে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘কে বেশি জনপ্রিয় তা ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বোঝা যাবে।’’

Advertisement

ঘটনাচক্রে সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে শিবসেনার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক করেন শিন্ডে। তাঁর ছেলে তথা শিবসেনার সাংসদ শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এ বার উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও দলকে সম্প্রসারিত করব এবং আমরা ওই রাজ্যগুলিতে নির্বাচনে লড়াই করব।’’ শিন্ডেসেনার এই ঘোষণা বিজেপিকে অসুবিধায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, শিন্ডেসেনা আলাদা ভাবে ভোটে লড়লে বিরোধীরা সুবিধা পেতে পারে।

সম্প্রতি শিন্ডে শিবিরের সাংসদ গজানন কীর্তিকরও তাঁদের সঙ্গে বিজেপির টানাপড়েনের কথা জানিয়েছিলেন। বিজেপির কারণে তাঁদের সাংসদ-বিধায়কেরা কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন বলে ইতিমধ্যেই শিন্ডেসেনার অন্দরে অভিযোগ উঠেছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

২০২২ সালের জুন মাসে শিবসেনার বিধায়কদলে ভাঙন ধরিয়ে উদ্ধব ঠাকরেকে সরিয়ে বিজেপির সাহায্যে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রিত্ব দখল করেছিলেন শিন্ডে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের পুত্রকে সরিয়ে তাঁর হাতে গড়া দলের দখলও পেয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু বছর ঘোরার আগেই ২ দলের মধ্যে মতপার্থক্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।

শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হলেও ফডণবীস পিছন থেকে সরকার পরিচালনা করেন, এই অভিযোগ গোড়া থেকেই। সম্প্রতি একটি যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে ঘিরে ২ পক্ষের বিরোধ চরমে ওঠে। কল্যাণ-ডোমবিভলি লোকসভার কেন্দ্রে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি নন্দু জোশীর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একটি যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জমা পড়ে। ওই কেন্দ্রেরই সাংসদ হলেন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে শ্রীকান্ত। বিজেপির অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতেই শিন্ডেসেনা ওই অভিযোগ দায়ের করেছে।

শিন্ডে সরকারের মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবীন্দ্র চহ্বাণ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোনও ভাবেই শ্রীকান্ত কিংবা তাঁর পরিবর্তে দাঁড়ানো শিন্ডে গোষ্ঠীর কোনও নেতাকে সমর্থন করবে না বিজেপি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই শ্রীকান্ত ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। উদ্ধব গোষ্ঠীও ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে শিন্ডেসেনাকে খোঁচা দিয়েছে। গত ১১ মাস ধরে শিন্ডে গোষ্ঠীর বিধায়ক-সাংসদদের প্রতি বিজেপি বিমাতৃসুলভ মনোভাব দেখিয়ে চলছে বলে তাদের অভিযোগ। শিন্ডে গোষ্ঠীর সাংসদদের যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন সঞ্জয় রাউতেরা। শিন্ডে সরকার পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement