বিজেপির সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।—ছবি পিটিআই।
উঠতে বসতে বিজেপি নেতারা কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র নিয়ে সমালোচনা করেন। সেই বিজেপিতে কিন্তু ‘পরিবারতন্ত্র’ ক্রমশ বাড়ছে। লোকসভা, রাজ্যসভা মিলিয়ে বিজেপির এত দিন ৪৪ জন সাংসদ ছিলেন, যাঁরা পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতা পেয়েছেন। আজ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে সংখ্যাটা ৪৫ দাঁড়াল।
রাজ্যসভায় ৬১ জন নবনির্বাচিত সাংসদের মধ্যে আজ ৪৫ জন শপথ নিয়েছেন। করোনার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অধিবেশনের মাঝের বিরতিতেও রাজ্যসভার কক্ষে শপথগ্রহণ হয়েছে। যাতে দূরত্ব বজায় রেখে সকলে বসতে পারেন। তার মধ্যেও সংক্রমণ ঠেকাতে শপথগ্রহণের পরে সই করার সময় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু পরামর্শ দিয়েছেন, ‘হয় নিজের কলমে সই করুন। আর রাজ্যসভার কলমে সই করলে, সেটা নিয়ে চলে যান।’ পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ নতুন সাংসদের মধ্যে একমাত্র সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যই দস্তুরমতো পাজামা-পাঞ্জাবি পরে বাংলায় শপথ নিয়েছেন। তৃণমূলের চার নতুন সাংসদ এদিন শপথ নেননি।
এ দিন সবথেকে বেশি আগ্রহ ছিল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সিন্ধিয়াকে ঘিরেই। বিজেপির সাংসদ হিসেবে শপথগ্রহণের পর মাধবরাও-পুত্রের মন্ত্রী হওয়ার পথে আর কোনও বাধা রইল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ সিন্ধিয়া-সহ নতুন বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সরকারি নীতি সম্পর্কে পড়াশোনা করে, সংসদে সক্রিয় হতে বলেন। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের অন্দরমহলে যাঁর সঙ্গে সিন্ধিয়ার সবথেকে বেশি রেষারেষি ছিল, সেই দিগ্বিজয় সিংহর পাশাপাশি সিন্ধিয়ার মতো কংগ্রেসে রাহুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কে সি বেণুগোপাল, রাজীব সতাভরাও এ দিন শপথ নিয়েছেন। শপথগ্রহণের আগে সিন্ধিয়া নিজে এগিয়ে গিয়ে দিগ্বিজয়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদকেও নমস্কার জানান।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ প্রায়শই রাহুল গাঁধীকে ‘শাহজাদা’ বা ‘নামদার’ বলে কটাক্ষ করেন। কিন্তু সিন্ধিয়ার আগেই লোকসভায় বিজেপির অনুরাগ ঠাকুর, জয়ন্ত সিনহা, প্রবেশ সিংহ বর্মা, পুনম মহাজন, প্রিতম মুণ্ডেরা সাংসদ হয়েছেন। সকলেই বিজেপি নেতাদের পুত্র-কন্যা। রাজ্যসভায় ছিলেন সি পি ঠাকুরের পুত্র বিবেক ঠাকুর। সিন্ধিয়ার মতো অন্য দল থেকে এসে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সাংসদদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের পুত্র নীরজ শেখরও। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, রাজনীতিকদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিতে এলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বে কংগ্রেসের মতো বংশপরম্পরায় একই পরিবারের সদস্যরা বসে থাকেন না।