জেএনইউ-বিতর্কে দেশেবিদেশে যতই সমালোচনা হোক, গোটা ঘটনায় নিজেদের জয়ই দেখছেন নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপি নেতৃত্ব।
মাত্র কুড়ি দিনেই ছাত্র নেতা থেকে জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বেগুসরাইয়ের কানহাইয়া কুমার। জেল থেকে বেরনোর পরে যে বক্তব্য তিনি রেখেছেন, তাতে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার বাদে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি এখনও বুঁদ হয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের ছাত্র-যুবদের একটি বড় অংশ কানহাইয়া-জাদুতে মুগ্ধ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি প্রথমে ঠিক করে কানহাইয়া প্রসঙ্গ নিয়ে আর না-এগিয়ে তার বদলে ‘জনদরদী’ বাজেটকে তুলে ধরা হবে। আর সময়ের নিয়মে থেমে যাবে জেএনইউ-বিতর্ক। কিন্তু যে ভাবে কানহাইয়ার প্রতি সমর্থন বাড়ছে, পাল্টা আক্রমণে নামারই পরিকল্পনা নিয়েছে দল।
বিজেপি মনে করছে, কানহাইয়া প্রসঙ্গ পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। বরং দেশভক্তির প্রশ্নে যাঁরা কানহাইয়ার অবস্থানের বিপক্ষে, তাঁদের আবেগকে উস্কে দেওয়া দরকার। বিজেপি মেনে নিচ্ছে, প্রথম রাউন্ডে কানহাইয়া কিছুটা এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পাল্টা হিসেবে তাঁর বক্তব্যকে দেশবিরোধী বলে তুলে ধরে লাগাতার প্রচার চালাবে বিজেপি। একই সঙ্গে কংগ্রেস বা বাম দলগুলি, যারা কানহাইয়াকে সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও প্রচার করতে চায় দল। সেই কৌশলেই গতকাল দলীয় সভাপতি অমিত শাহের পরে আজ বৃন্দাবনে বিজেপির যুব মোর্চার অনুষ্ঠানে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এক দিকে কানহাইয়ার নাম না করেও তাঁকে আক্রমণ, অন্য দিকে রাহুল তথা কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিশানা করেন তিনি।
আজ কী বলেছেন জেটলি?
অমিত শাহের মতোই জেটলিও এ দিন কানহাইয়ার নাম করেননি। তাঁর বক্তব্য, দেশদ্রোহের অপরাধেই ওই ছাত্র নেতাকে জেলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে তিনি বক্তৃতায় ‘জয় হিন্দ’ বলতে বাধ্য হয়েছেন, তেরঙ্গা উড়িয়েছেন। এটাই বিজেপির নৈতিক জয়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর মতে, বিষয়টি নিয়ে বিজেপি সরব হওয়াতেই ওই ছাত্রনেতা নিজের দেশবিরোধী অবস্থান বদলাতে বাধ্য হন। জেটলির কথায়, ‘‘ওই ঘটনায় বিজেপি তার জাতীয়তাবাদী দায়বদ্ধতা প্রমাণ করেছে এবং জয়ী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে।’’ গতকাল উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কানহাইয়া-বিরোধী হুঙ্কার বা অমিত শাহের কড়া বক্তব্যের পরে আজ জেটলির জাতীয়তাবাদী অবস্থান দেখে অনেকেই মনে করছেন, পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেরুকরণের তাস খেলতেই পরিকল্পিত পদক্ষেপ করছে বিজেপি।
আজ জেটলির নিশানা থেকে বাদ যাননি রাহুলও। গত কাল অমিত শাহ কিছুটা রেখেঢেকে আক্রমণ করলেও আজ রাহুলকে সরাসরি নিশানা করেন জেটলি। দল হিসেবে কংগ্রেসের বদলে ব্যক্তি রাহুলকেই আক্রমণ করেন তিনি। কানহাইয়ার সমর্থনে রাহুলের সরব হওয়াকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘ইন্দিরা বা রাজীব গাঁধী হলে কখনওই এ কাজ করতেন না। আসলে মতাদর্শগত শূন্যতার কারণেই দেশকে ভাগ করার স্লোগান যাঁরা দিয়েছিলেন, তাদের সমর্থনে মুখ খুলেছেন রাহুল।’’ জেটলির বক্তব্যে স্পষ্ট, জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে রাহুল ও দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। জেটলি বলেন, ‘‘একমাত্র জরুরি অবস্থা ছাড়া বরাবরই কংগ্রেস দেশভাগের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল। এখন কিছু লোক ইয়াকুব মেমন বা আফজল গুরুর সমর্থনে মুখ খুলছে। এদের একটা অংশ জেহাদি, বাকি বড় অংশ মাওবাদী। দেশের দুর্ভাগ্য হল, কংগ্রেসের এক নেতা (রাহুল) এদের জন্য সহানুভূতি দেখাচ্ছেন!’’
বিজেপি যে অঙ্ক কষেই তাঁকে নিশানা করছে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন রাহুল নিজেও। গতকালই তাই অসমে এক সভায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কেউ দেশবিরোধী স্লোগান দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই। কিন্তু তা বলে গোটা জেএনইউকে কেন দেশবিরোধী বলা হবে?’’ এ দিন কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই মেরুকরণ করতে চাইছেন জেটলিরা।’’