রবিবার রাজ্যপালের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন মানিক সরকার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
একই দলের দুই মুখ। শনিবার ত্রিপুরার ফলপ্রকাশের পরই, বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে কার্যত ত্রিপুরাছাড়া করার হুমকি দিয়েছিলেন অসমের বিজেপি অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। আর পরদিনই সৌজন্যের বার্তা নিয়ে সিপিএম দফতরে পৌঁছে গেলেন ত্রিপুরার সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।
২০ বছর ধরে ত্রিপুরার সরকার সামলেছেন মানিক। তাঁর অতি বড় রাজনৈতিক শত্রুদের কাছেও বরাবর সম্মানের আলাদা আসন রয়েছে মানুষটির। শনিবার তিনি নিজে জিতলেও দল বিপর্যস্ত হয়েছে। গণনা চলাকালীনই তাঁর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা মানিকের সঙ্গে যে অভব্যতা করেন, তা নিয়ে বিজেপির মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে।
এর মধ্যেই জয়ের দম্ভে আর এক প্রস্ত এগিয়ে গিয়ে হিমন্তবিশ্ব শর্মা মন্তব্য করে বসেন, ‘‘মানিক সরকারের এখন তিনটে উপায় রয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে যেতে পারেন, কারণ সেখানে এখনও কিছু সিপিএমের অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি সিপিএম ক্ষমতাসীন রাজ্য কেরলে যেতে পারেন। আরও তিন বছর কেরলে সিপিএম থাকছে। অথবা তিনি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে যেতে পারেন।’’ অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত, অমিত শাহের ‘কংগ্রেস মুক্ত উত্তর-পূর্ব’ মিশনের কাণ্ডারী। নর্থ ইস্ট ডেমোক্রাটিক অ্যালায়েন্স বা নেডার মাথায় তাঁকেই রেখেছেন বিজেপি সভাপতি। ত্রিপুরার ভোটেও বড় দায়িত্ব ছিল তাঁর। এর আগে ভোটের প্রচারে গিয়েও হিমন্ত বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচন হয়ে গেলেই মানিককে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
নির্বাচনী প্রচারে অমিত শাহের সঙ্গে বিপ্লব দেব। আগরতলায়।
শনিবারের জয়ের পর বিজেপি নেতাদের এহেন মন্তব্য বা দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে বার্তা দিতেই যেন রবিবার সিপিএম পার্টি অফিসে হাজির হন ত্রিপুরার বিজেপি সভাপতি বিপ্লব দেব। সে রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তিনিই সবথেকে এগিয়ে।
আরও পড়ুন:
যেন একাকী নির্জন প্রাসাদে আত্মবিশ্লেষণে মগ্ন বিষণ্ণ সিপিএম নেতৃত্ব
হুমকি-কটূক্তির দিনে একলা লড়়াই মানিকের
রবিবার প্রয়াত সিপিএম মেতা খগেন্দ্র জামাতিয়ার মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছিল দলীয় দফতরে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে যান বিপ্লব। সেখানে মানিক সরকারের আশীর্বাদও নেন তিনি। সিপিএম অফিস থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিপ্লব বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে এটাই নিয়ম। হারজিত থাকবেই। মানিক সরকার দীর্ঘদিন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আমার দাদার মতো। অনেক অভিজ্ঞ মানুষ। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তাঁর পরামর্শও নেব।’’ পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীদেরও কাছে তাঁর অনুরোধ, কারও প্রতি কোনও রকম বিদ্বেষমূলক আচরণ যেন না করা হয়।
গণনা কেন্দ্রে মানিকের প্রতি বিজেপির অসৌজন্য নিয়ে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সিপিএম। প্রশ্ন তুলেছে হিমন্তের মন্তব্য নিয়েও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ বলেন, ‘‘বিজেপির নেতাদের এই ধরনের কথার উত্তর দেওয়াই রুচিতে বাধে। গতকাল গণনা কেন্দ্রে মানিক সরকারের সঙ্গে যা হয়েছে তা নিন্দনীয়। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলাম। কমিশন সময়মতো হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি এ দিকে যেত না। যা হয়েছে তা ভীষণই অগণতান্ত্রিক কাজ।’’
তবে এ সব কিছু নিয়ে মুখ খুলতে চাননি মানিক সরকার নিজে। রবিবার তিনি রাজ্যপালের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাজ্যপাল তাঁকে অনুরোধ করেছেন, যতদিন না পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কাজ শুরু করছেন, ততদিন তিনি যেন দায়িত্ব পালন করেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২০ বছর আমরা সরকার চালিয়েছি, তাতে সাহায্য করেছেন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের ধন্যবাদ।’’
—ফাইল চিত্র।
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে ভুলবশত মুখ্যমন্ত্রী লেখা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই গুরুতর ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত)