আসন সংখ্যা ৭০। শুক্রবার তাই দিল্লি বিধানসভায় ৭০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং দেশপ্রেমিকের ছবি উন্মোচন করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। গ্যালারিতে রাখা এই ছবিগুলির মধ্যে রয়েছেন আসফাকউল্লা খান, ভগৎ সিংহ, বিরসা মুন্ডা, সুভাষচন্দ্র বসু।
আর রয়েছেন টিপু সুলতান। মহীশূরের শাসকের এই ছবি ঘিরেই রাজধানীতে এখন শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বিধানসভায় টিপুর ছবি রাখার তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের দাবি, টিপু ছিলেন কট্টর হিন্দু-বিরোধী এবং গণহত্যাকারী। কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, টিপু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। আর শাসক আপের বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘‘আমি বিজেপি বিধায়কদের কাছে ওঁদের দল বা আরএসএস-এর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম চেয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা তা দিতে পারেননি।’’ সৌরভের এই মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তি বাড়িয়েছে বিজেপির।
টিপুকে নিয়ে রাজনীতি অবশ্য নতুন নয়। গত দু’বছর ধরে ধুমধাম করে টিপুর জন্মবার্ষিকী পালন করছে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার। ২০১৫ সালে টিপুর জন্মবার্ষিকী পালনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ থেকে ছড়িয়েছিল হিংসা। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত কোদাগুতে প্রাণ গিয়েছিল দু’জনের।
এ বার সেই টিপু বিতর্ক দিল্লিতে। বিজেপি বিধায়ক মনজিন্দ্র সিংহ সিরসা বলেন, ‘‘আমি আপ-এর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই রকম বিতর্কিত এক জনের ছবি কেন রাখা হচ্ছে? কেন দিল্লির কোনও মহান ব্যক্তির ছবি রাখা হচ্ছে না? দিল্লির প্রতি যাঁর কোনও অবদান নেই, এমন এক জন লোকের ছবি কেন বিধানসভায় রাখা হচ্ছে?’’ যার উত্তরে আপ-এর কটাক্ষ, ওঁরা তো স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে নিজেদের কোনও নেতার নামই দিতে পারল না!
টিপু বিরোধিতাকে পাত্তা দিতে নারাজ দিল্লি বিধানসভার স্পিকার রামনিবাস গোয়েলও। তিনি বলেন, ‘‘কোনও না কোনও ছুতোয় বিজেপি একটা বিতর্ক তৈরি করতে চায়। এখন তারা বিধানসভার গ্যালারিতে টিপু সুলতানের ছবি রাখার বিরোধিতা করছে। আমি তাদের বলতে চাই, ভারতীয় সংবিধানের ১৪৪ পৃষ্ঠায় টিপু সুলতানের ছবি রয়েছে। তা হলে যাঁরা দেশকে স্বাধীন করতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং সংবিধান রচনা করেছিলেন, হয় তাঁরা, নয় তো ওরা (বিজেপি) দেশদ্রোহী। এ সব না করে বিজেপির উচিত উন্নয়নের রাজনীতিতে সামিল হওয়া।’’
গত কাল ছবিগুলির উন্মোচন করে কেজরীবালও বলেন, ‘‘সর্বত্র হিংসার আবহ তৈরি করা হচ্ছে। মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছেন না।’’
বিধানসভায় রাখা ছবিগুলির কাজ শুরু হয়েছিল ৬ মাস আগে। ছবিগুলি এঁকেছেন শিল্পী গুরু দর্শন সিংহ বিনকাল।