তিন মাস আগে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে চূড়ান্ত হতাশায় ডুবে গিয়েছিল কংগ্রেস। আজ সেই ঘরেই সামান্য হলেও খুশির হাওয়া। বিহার তো বটেই, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং পঞ্জাবের উপনির্বাচনের ফল থেকে ভাল খবর পেয়েছে ২৪ আকবর রোড। তবু কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, মোদী-ঝড়ের গতি হয়তো কমেছে, কিন্তু এখনও তা শেষ হয়ে যায়নি।
বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে বিজেপিও শিক্ষা নিল, শুধু নরেন্দ্র মোদীকে দেখিয়ে ভোট করানোর দিন শেষ হতে চলেছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করতে হলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামিয়ে জাতপাতের সমীকরণকে মাথায় রেখেই সংগঠনকে শক্ত করতে হবে।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার এখনও একশো দিন পার হয়নি। মোদীর ঘনিষ্ঠ অমিত শাহ বিজেপি সভাপতি হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন। তাতেই বিহারে ধর্মনিরপেক্ষ জোটের নতুন সমীকরণে দু’টি আসন যেমন হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির, তেমনই মধ্যপ্রদেশেও শাসক বিজেপি-র থেকে একটি আসন আজ ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। এবং তারা সফল দক্ষিণে কর্নাটকের বল্লারীতে বিজেপি-র দীর্ঘদিনের শক্ত ঘাঁটিতেও। শিয়রে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা ভোট। তার আগে কংগ্রেস নেতৃত্ব ফের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছেন। বিজেপি যে রাতারাতি দুর্বল হয়ে পড়ছে এমনটা অবশ্য তাঁরা মনে করছেন না। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, মোদী ঝড়ের গতি কমেছে।
বিজেপির কাছে চিন্তার বিষয় সেটাই। লোকসভা নির্বাচনে যাবতীয় সমীকরণ ছাপিয়ে নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে গোটা দেশকে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছিলেন, সেটা এ বারে কাজ করছে না। এ কথা দল বুঝতে পেরেছে। মাত্র এক মাস আগে উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা উপনির্বাচনে তিনটিতেই পরাস্ত হয়েছিল বিজেপি। উত্তরাখণ্ডে ১১টি জেলা পরিষদের নির্বাচনে ৯টিই দখল করেছে কংগ্রেস। তার পর আজ দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে উপনির্বাচনের ফলাফলেও একই ছবি। ইয়েদুরাপ্পা থেকে শাহনওয়াজ হুসেনের মতো নেতারা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, এই ফল আদৌ সন্তোষজনক নয়। এবং তাঁরা মেনে নিচ্ছেন, সামনে লড়াইটা আরও কঠিন। কারণ, লোকসভায় সব সময় কেন্দ্রে ক্ষমতা বদলের কথা ভেবে ভোট হয়। মোদী সেখানে কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের ডাক দিয়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী এক সূত্রে বেঁধেছিলেন। কিন্তু বিধানসভায় স্থানীয় বিষয়গুলি বড় হয়ে ওঠে। প্রার্থী বাছাই, জাতপাত, ধর্মীয় সমীকরণ বড় হয়ে ওঠে। তার উপর লোকসভায় মোদীর নামে ধামাচাপা পড়া গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভোটের পরেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে এই সব ক’টি দিকই মাথায় রাখতে হবে বিজেপি নেতৃত্বকে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ আজ বলেন, “লোকসভা ভোটে বিজেপি বিপুল ভোটে জিতেছে ঠিকই। কিন্তু গোটা দেশে এখনও ‘মোদী হাওয়া’ বইছে বলে বিজেপি নেতারা যে দাবি করছিলেন, তা আজ ভুল প্রমাণিত হল।” যদিও শাকিলদের বক্তব্য, এই ফলাফলেই কংগ্রেস যে খুব উচ্ছ্বসিত তা নয়। কিন্তু তাঁদের আশা, লোকসভা ভোটে গোহারার পর কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের মনোবল যে ভাবে ভেঙেচুরে গিয়েছিল, তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কিছুটা শক্তি পাবেন তাঁরা। বিশেষ করে যে রাজ্যগুলিতে বিধানসভার ভোট আসন্ন সেখানে কংগ্রেস কর্মীরা লড়াইয়ের জোর পাবেন।
শুধু একাধিক আসনে জয়ই নয়, পঞ্জাবে আপ-এর হারও আশা জাগিয়েছে কংগ্রেসে। পাটিয়ালা আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে আপ-এর। অন্যটিতেও নামমাত্র ভোট পেয়েছে তারা। লোকসভা ভোটে গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র পঞ্জাবে কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ করে চারটি আসন জিতেছিল আপ। এই অবস্থায় তাদের জনভিত্তি দুর্বল হওয়ার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কংগ্রেস। তাদের আশা, হরিয়ানা ও দিল্লিতেও আপ-এর কাছে হারানো জমি কিছুটা হলেও ফিরে পাবে তারা।
কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ জানালেন, বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটে তাঁরা একই সূত্র প্রয়োগ করতে চলেছেন। দলের ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বি কে হরিপ্রসাদ আজ বলেন, আরজেডি, জেডিইউ, কংগ্রেস এবং জেএমএম-এর জোট হবে ঝাড়খণ্ডে। আরও কিছু নির্দল ও ছোট আদিবাসী দলকেও তাতে সামিল করার চেষ্টা চলছে। আশা করা হচ্ছে, বিহারের মতো ঝাড়খণ্ডেও জোট সফল হবে।