জয় উদ্যাপন বিজেপি সমর্থকদের। ছবি: পিটিআই।
ললিত মোদী বিতর্ক থেকে ব্যপম কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত বিজেপি-র মুখে আজ অনেক দিন পর হাসি ফোটাল বিহারের বিধান পরিষদ নির্বাচনের ফল। লালু-নীতীশ-কংগ্রেসের জোটকে পিছনে ফেলে আজ ভোটের ফলে এগিয়ে গেল বিজেপি। বিধান পরিষদের নির্বাচন সে ভাবে সামগ্রিক ভাবে আমজনতার রায়ের প্রতিফলন না হলেও এ মাসের শেষে নরেন্দ্র মোদীর প্রচার শুরুর আগে বিজেপি নেতৃত্বকে অক্সিজেন যোগাল এই ফল।
এই নির্বাচন জনমতের প্রতিফলন না হলেও গোড়া থেকে বিজেপি নেতৃত্ব এটিকে বিহার বিধানসভার আগে সেমিফাইনাল বলেই তুলে ধরেছিল। পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন নীতীশ কুমারও। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা গেল ২৪টির মধ্যে ১৮টি আসনে লড়ে ১২টিতেই জয়লাভ করেছে বিজেপি। তার মধ্যে একটি আসনে বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টির এক প্রার্থীও জয়লাভ করেছেন। জেডিইউ পাঁচটি আসনে, আরজেডি চারটি আসনে এবং কংগ্রেস একটি আসনে জিতেছে। সব মিলিয়ে ১০টি আসনে জিতেছে শাসক জোট। ভোট হওয়া ২৪টি আসনের সিংহভাগই ছিল জেডিইউ-র দখলে। তবে দশটি করে আসনে লড়াই করেছিল শাসক দল জেডিইউ এবং আরজেডি। কংগ্রেস তিনটি আসনে এবং এনসিপি একটি আসনে লড়াই করেছিল।
দিল্লি বিধানসভায় পরাজয়ের পর বিহারের ভোট এ বারে সম্মানের লড়াই নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কাছে। এ মাসের ২৫ তারিখ মুজফ্ফরপুর থেকে প্রচার শুরু করছেন মোদী। তার আগে আজকের ফল আসতেই দিল্লি থেকে পটনায় বিজেপি শিবিরে জয়ের উৎসব শুরু হয়ে যায়। দুই জায়গায় ফাটানো হয় আতসবাজি। বিহারের ভোটের দিকে তাকিয়ে জাতপাতের রাজনীতির সুর চড়াতেও শুরু করেন অমিত শাহ। দিল্লিতে দলের সদর দফতরে অমিত শাহ বলেন, বিজেপি এমন একটি দল যেখানে সবথেকে বেশি ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও ওবিসি-র। বিজেপি-র এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে যে ভাবে সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া থেকে শিবরাজ সিংহ চৌহান নিয়ে দলের মুখ পুড়েছে, তার মধ্যে আজকে বিহারের ফল দলের কাছে অনেকটাই স্বস্তি এনে দিয়েছে। সংসদের অধিবেশনের আগে এ বারে এই ফলকে সামনে রেখেই আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। দিল্লিতে সনিয়া গাঁধী যতই ইফতার পার্টি দিয়ে অ-বিজেপি দলগুলিকে একত্রিত করার চেষ্টা করুন, আজকের ফল প্রমাণ করে দিয়েছে বিরোধী জোটের শক্তি নেই। এখনও নরেন্দ্র মোদীর হাওয়া অব্যাহত।’’
যদিও নীতীশ কুমার বলেন, ‘‘এই নির্বাচনে সে ভাবে রাজনীতির কোনও ভূমিকা নেই। সাধারণ মানুষেরও কোনও ভূমিকা নেই। তা ছাড়া আমরা আমাদের নিজেদের আসন ছেড়েছি। কংগ্রেসের আসন ছিল না। তারাও একটিতে জিতেছেন। এই নির্বাচনের ফল নিয়ে বিজেপি একটু বেশি মাতামাতি করছে। ওঁরা ভ্রমের মধ্যে বাঁচতে চায় বলেই।’’ কিন্তু সুশীল মোদীর বক্তব্য, ‘‘সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন জেলায় ভয় দেখিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে জেডিইউ-আরজেডি। তা সত্ত্বেও আমাদের ফল ভাল হয়েছে। নীতীশ কুমারের অহঙ্কারের পতন হয়েছে। এই নির্বাচনে ৬০ শতাংশ ভোটার দলিত এবং মহাদলিত সম্প্রদায়ের।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি এবং আরজেডি ত্যাগী সাংসদ রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদবের অনুগামীদের সমর্থনের জেরেই এই ফল করতে পেরেছে বিজেপি। লালুপ্রসাদের দুর্গেও ফাটল ধরাতে সফল হয়েছে বিজেপি। ছাপরা, সিওয়ান ও গোপালগঞ্জে বিজেপি-র প্রার্থীরা জিতেছেন। তবে পটনা কেন্দ্রে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী রীতলাল যাদব। বেউর জেল থেকেই নির্বাচনে লড়েছিলেন প্রাক্তন আরজেডি নেতা রীতলাল। খুন, অপহরণ, অস্ত্র পাচার-সব বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় অভিযুক্ত রীতলাল।