ফের রাজনীতির ঘোলা জলে শাহজাহানের স্বপ্নের প্রেমের সৌধ।
তাজমহল ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে কলঙ্কের দাগ’ বলে মন্তব্য করে নতুন বির্তক বাধালেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম। মুজফ্ফরনগরের এই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে দাঙ্গা লাগানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের মেরঠে রবিবারের জনসভায় বলতে গিয়ে হঠাৎই তাজমহল প্রসঙ্গ টেনে আনেন সোম। বলেন, ‘‘তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতিতে কলঙ্ক চিহ্ন। রাজ্যের পর্যটন বইয়ে তাজমহলের নাম বাদ পড়ায় শুনছি অনেকেই হতাশ!’’ সঙ্গীতের কথায়, তাজমহলের স্রষ্টা শাহজাহান নিজের বাবাকেই বন্দি করেছিলেন। হিন্দুদের খতম করতে চেয়েছিলেন। এই ইতিহাস তাঁরা পাল্টাবেন। পরে রাতে অবশ্য সুর নরম করে সোম বলেন, ‘‘আমি তাজমহলের বিরুদ্ধে নই। যারা সেটা বানিয়েছে তাদের বিপক্ষে।’’
আরও পড়ুন:চোখ রাঙালে উপড়েই নেব, হুমকি বিজেপি নেত্রীর
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিধায়কের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে কথা বলতে লজ্জা হয়। কিছু দিন আগে তো মোগলসরাইয়ের নামও বদলে দিয়েছে। দেশের নামও বদলে দিতে বেশি দেরি নেই। তখন ওরা থাকবে কোথায়?’’ মমতার কথায়— ‘‘দেশে এখন স্বৈরতন্ত্রের সব চেয়ে কালো অধ্যায় চলছে।’’ বিষয়টি বিধায়কের ব্যক্তিগত মত বলে বিজেপি অবশ্য এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। দলের নেতা নলিন কোহালি বলেন, ‘‘তাজমহল ইতিহাসের অঙ্গ।’’ উত্তরপ্রদেশের পর্যটনমন্ত্রী রীতা বহুগুণা জোশীর কথায়, ‘‘তাজমহল আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। রাজ্য সরকার তাজমহল সংলগ্ন আগরার পরিকাঠামো উন্নয়নে দেড়শো কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।’’ সোমের মতামত ব্যক্তিগত বলেও, বিজেপি নেতা জি ভি এল এন রাও বলেন, ‘‘এ দেশের ইতিহাসে মুঘল আমলটি হল শোষণ, বর্বরতা ও তুলনাহীন অসহিষ্ণুতার উদাহরণে ভর্তি। যা ভারতীয় সংস্কৃতির মূল সুরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’’ এমআইএম প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েসির প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি মুঘলদের বানানো লালকেল্লা থেকে নরেন্দ্র মোদী তিরঙ্গা তোলা বন্ধ করে দেবেন?’’ সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র সি পি রাই বলেন, ‘‘বিজেপি ভুলে যাচ্ছে ইতিহাস থেকে ভাল ও মন্দ, দু’টোর শিক্ষাই নিতে হয়।’’
বির্তকের সূত্রপাত যোগী সরকারের ৬ মাস পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত পুস্তিকাকে ঘিরে। তাতে রাজ্যের পর্যটনের প্রসার ঘটাতে বেশ কিছু পর্যটন স্থলের নাম থাকলেও, বাদ যায় তাজমহল।
এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় মাঝে মাঝেই ঘুরে ফিরে আসে তাজমহল প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যেও তো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল রয়েছে। এগুলো আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। ওরা কি ঠিক করে দেবে— তাজমহল বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হিন্দু না মুসলিম না খ্রিস্টান!’’ মমতার কথায়— নানা ধর্ম, জাতির মানুষ নিয়ে আমাদের দেশ। আমাদের পরিবার। শরীর থেকে কি হাত-পা-পাকস্থলি আলাদা করা যায়?
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ সবই ওদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। এর বিরোধিতা করলেই সিবিআই-ইডি-র ভয় দেখানো হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ দেশে এখন কোনও গণতন্ত্রই নেই!’’