১৯৯৮ সাল থেকে বিজেপি টানা গুজরাতে ক্ষমতায় রয়েছে। ফাইল চিত্র।
সেই মার্চ থেকে প্রতি মাসে গুজরাতে গিয়ে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন বা শিলান্যাস করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন গুজরাতের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দেওয়ার পরে রবিবার থেকেই বিজেপির হয়ে রাজনৈতিক প্রচার শুরু করছেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি সূত্রে খবর, ওই দিন ভাবনগর, সুরেন্দ্রনগর ও ভালসাদে তিনটি জনসভা করবেন তিনি।
১৯৯৮ সাল থেকে বিজেপি টানা গুজরাতে ক্ষমতায় রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ বছর মোদীই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পাঁচ বছর আগে ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৮২টি আসনের মধ্যে ৯৯টি আসনে জিতে বিজেপি ফের ক্ষমতায় এসেছিল। তারপর থেকে গত পাঁচ বছরে কংগ্রেসের একাধিক বিধায়ক দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে ১১১-তে পৌঁছেছে। বিজেপি এ বারেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তাকে ভরসা করেই ভোটের বৈতরণী পার হতে চাইছে। কিন্তু ভোট ঘোষণার ঠিক আগে মোরবীতে কেব্ল সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা বিজেপি সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
কমিশন ভোট ঘোষণার আগেই এ দিন অমিত শাহ গান্ধীনগরে বিজেপির রাজ্য দফতরে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভোটের কৌশল ও প্রার্থী বাছাই নিয়ে বৈঠক করেন। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল, রাজ্য সভাপতি সি আর পাটিল, পুরুষোত্তম রুপালা ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়াও বৈঠকে ছিলেন। এ দিন ৪২টি আসনের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শাহ সম্প্রতি দাবি করেছেন, বিজেপ এ বার গুজরাতে দুই-তৃতীয়াংশ আসন জিতবে। সেই লক্ষ্যে হিমাচল থেকে গুজরাতে পৌঁছেছেন তিনি। আগামী তিন দিনও প্রার্থী বাছাই নিয়ে গান্ধীনগরে বৈঠক করবেন। মোরবীর দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গেও তাঁর দেখা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দিল্লি ছেড়ে নিজের রাজ্যের ভোটের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ভাবে গুজরাতে পড়ে থাকা নিয়ে আজ কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে। গুজরাতে কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত নেতা রঘু শর্মা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর উচিত গান্ধীনগরেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অস্থায়ী অফিস খুলে ফেলা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যে প্রবল ভাবে সরকার বিরোধিতার হাওয়া বইছে। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে প্রতি মাসে গুজরাতে গিয়ে (এখনও পর্যন্ত মোট) এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি অর্থের প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস করতে হয়েছে। এ সব অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এক-একটি সভায় মঞ্চ ও তাঁবু তৈরিতে ১২ কোটি টাকা করে খরচ হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যায় মোরবীর দুর্ঘটনার তিন দিন পরে বুধবার গুজরাতে সরকারি শোক পালন করা হয়েছে। কারণ সোম, মঙ্গলবারও প্রধানমন্ত্রীর ফিতে কাটার অনুষ্ঠান ছিল।
দু’দফায় গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম দফায়, ১ ডিসেম্বর মূলত পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কচ্ছ, উপকূলবর্তী জেলা ও মধ্য গুজরাতের কিছু জেলার ৮৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। দ্বিতীয় দফায়, ৫ ডিসেম্বর ৯৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের সীমান্তবর্তী আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিও রয়েছে। যেখানে বিজেপি গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের থেকে অনেকখানি পিছিয়ে ছিল।
কংগ্রেস এ বার প্রচারের সুর উচ্চগ্রামে না নিয়ে গিয়ে, গ্রামে-গ্রামে, আদিবাসী এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছে। বুথ স্তরে সংগঠনে জোর দিচ্ছে। সেই সঙ্গে ক্ষমতায় এলে ১১ দফা প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে ৫০০ টাকায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার, ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত নিখরচায় বিদ্যুতে ছাড়, ১০ লক্ষ টাকার পর্যন্ত নিখরচায় চিকিৎসা, কৃষকদের জন্য তিন লক্ষ টাকার ঋণ মকুব, প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা নিঃশুল্ক বিদ্যুৎ, সরকারি ক্ষেত্রে ঠিকায় নিয়োগ বন্ধ করা, ৩০০ টাকা বেকারত্ব ভাতা, তিন হাজার সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কোভিডে মৃতর পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, সমবায় ক্ষেত্রে দুধে ভর্তুকির মতো এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
অন্যান্য বারের মতো কংগ্রেস নেতারা এ বারও দাবি করছেন, নির্বাচনে জিতে কংগ্রেসই গুজরাতের ক্ষমতায় আসতে চলেছে। কিন্তু অরবিন্দ কেজরীওয়াল যে ভাবে গুজরাতের ময়দানে নেমেছেন, তাতে কংগ্রেসের ‘ভয়’, আম আদমি পার্টি (আপ) গোয়ার মতো গুজরাতেও কংগ্রেসের ভোট কাটবে। কেজরীওয়াল জানিয়েছিলেন, গুজরাতের মানুষের মতামত নিয়েই তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঠিক করা হবে। শুক্রবার আম আদমি পার্টির গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। তাই দেরি না করে কংগ্রেসও দ্রুত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিতে চাইছে। মল্লিকার্জুন খড়্গে, সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের নির্বাচনী কমিটির এক দফায় বৈঠক হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার ফের বৈঠক হবে। কংগ্রেস নেতা রঘু শর্মার অভিযোগ, আম আদমি পার্টির আসলে বাস্তবের জমিতে কোনও ভিত্তি নেই। টাকা দিয়ে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। বিজেপির ‘বি-টিম’ হিসেবেই কেজরীওয়াল ও আসাদুদ্দিন ওয়েইসি কংগ্রেসের ভোট কাটতে গুজরাতে নামছে।