হার্দিক পটেল। ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছর আগে পাটিদার সংরক্ষণের দাবিতে তাঁর নেতৃত্বে গুজরাতে হওয়া আন্দোলন বিজেপির ক্ষমতায় আসা প্রায় রুখে দিয়েছিল। কোনও ভাবে কান ঘেঁষে গুজরাতে জিতেছিল বিজেপি। সেই পাটিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক পটেল কংগ্রেস ছেড়ে এ যাত্রায় বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন আমদাবাদ জেলার বিরঙ্গম আসন থেকে। ফলে পাটিল তথা পাটিদারদের ভোটের বড় অংশ দলের পক্ষে থাকবে বলেই আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ফলে গত বার সৌরাষ্ট্র এলাকায় খারাপ ফল করা বিজেপি এ বার ওই এলাকায় ভাল ফল করবে বলেই আশা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
দু’বছর আগে, ২০২০ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন হার্দিক। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। তার পরেই তাঁকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দল। হার্দিকের আন্দোলন থেকে সরে আসা এবং বিজেপিতে যোগদান নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, আর্থিক ভাবে অনগ্রসরদের শিক্ষা ও চাকরিতে দশ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্তই পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিয়েছে। যার ফলে পাটিদার আন্দোলন আজ মুছে গিয়েছে রাজ্য থেকে। সরকারের ওই সিদ্ধান্তে পাটিদার সমাজ এখন বিজেপির পাশে কোমর বেঁধে দাঁড়িয়েছে। গুজরাতের জাতপাতের রাজনীতিতে রাজ্যে ১৮২টি আসনের মধ্যে অন্তত ৫০টি আসনে পাটিদার ভোট নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এ ছাড়া আরও অন্তত ৪০টি আসনে প্রার্থীদের হারা-জেতার পিছনে পাটিদার ভোটের প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষি ও ব্যবসা, উভয় দিক থেকেই আর্থিক ভাবে প্রভাবশালী ওই সমাজের রাজ্যের অর্ধেক সংখ্যক আসনে প্রভাব রয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যা মোট ১৪ শতাংশ হল পাটিদার। যাদের উপস্থিতি রয়েছে মূলত আনন্দ, খেড়া, মেহষণার মতো জেলাগুলিতে। এ ছাড়া পাটন, আমদাবাদ ও সুরাতে পটেলদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সৌরাষ্ট্র এলাকায় রাজকোট, অমরেলি, মোরবি জেলাতেও পাটিদার সমাজ সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তি। সেই কারণে এ বার রাজ্যের ৪৫টি আসনে পাটিদার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। পিছিয়ে নেই অন্য দলগুলিও। কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি যথাক্রমে ৪২টি ও ৪৬টি আসনে পাটিদার প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে।
নব্বইয়ের দশক থেকে পাটিদারেরা বিজেপির কট্টর সমর্থক হলেও সেই দলীয় জনভিত্তিতে প্রথম ভাঙন ধরান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা কেশুভাই পটেল। বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসে পাটিদারদের নিয়ে আলাদা দল গড়েন তিনি। বিজেপি বিরোধী পাটিদার আন্দোলের সূচনা হয় তখন থেকে। পরবর্তী সময়ে পাটিদারদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সংরক্ষণের দাবিতে ২০১৫-১৬ সালে রাজ্য জুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন হার্দিক পটেল। সংরক্ষণের ওই দীর্ঘ দিনের দাবি নিয়ে হার্দিক আন্দোলনে নামায় সে সময়ে পাটিদার বা পটেল সমাজের একটি বড় অংশ হার্দিকের সমর্থনে পথে নামে। সরকার দমননীতির পথে নেমে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। বিজেপির সমীক্ষা অনুযায়ী, অন্তত কুড়িটি আসনে পাটিদার ভোট দলের বিপক্ষে যায়। যার ফলে বিজেপির আসন ২০১২–তে যেখানে ১১৬টি ছিল, তা ২০১৭-তে নেমে আসে ৯৯-এ। অন্য দিকে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৬০ থেকে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৭৭। ফলে ১৮২ আসনে গুজরাত বিধানসভায় ২০১৭-তে সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে মাত্র সাতটি আসন বেশি পেয়ে কোনও ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয় বিজেপি। ভোট সমীক্ষায় দেখা যায়, সুরাতে কোনও ভাবে আসন ধরে রাখতে পারলেও, মোরবি ও আমরেলি জেলায় পাটিদার সমাজ সম্পূর্ণ পিছন থেকে সরে গিয়েছে বিজেপির।
কেবল গুজরাতই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই আর্থিক ভাবে অনগ্রসরদের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের দাবি উঠতে শুরু করেছিল। তাই ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই আর্থিক ভাবে অনগ্রসরদের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে দশ শতাংশ সংরক্ষণের পক্ষে সংসদে বিল পাশ করে সরকার। বিষয়টি আদালতে গেলে সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছর সরকারের ওই সিদ্ধান্তে সবুজ সঙ্কেত দেয়। বিজেপি শিবিরের দাবি, সরকারের ওই সিদ্ধান্তেই হার্দিক আন্দোলন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। হার্দিকের দাবি, পাটিদার সমাজের একটি বড় অংশ এখনও তাঁর পিছনে রয়েছে।