গুজরাত

গ্রামে বিজেপির পরাজয়, প্রশ্নের মুখে মোদী মডেল

বিপর্যয় অব্যাহত। বিহারের পর এ বার খাস নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে জমি হারাল বিজেপি। গুজরাতে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে বুধবার। আর সেই ফলে স্পষ্ট, বিজেপি প্রবল ধাক্কা খেয়েছে গ্রামাঞ্চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৯
Share:

বিপর্যয় অব্যাহত। বিহারের পর এ বার খাস নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে জমি হারাল বিজেপি। গুজরাতে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে বুধবার। আর সেই ফলে স্পষ্ট, বিজেপি প্রবল ধাক্কা খেয়েছে গ্রামাঞ্চলে।

Advertisement

দেখা যাচ্ছে, আমদাবাদ, সুরাত, রাজকোট, বডোদরা, ভাবনগর, জামনগরের মতো ছ’টি পুর নিগম নিজেদের দখলেই রেখেছে বিজেপি। ৫৬টি পুরসভার মধ্যে ৪০টিতে জিতেছেও তারা। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে গোহারা হেরেছে বিজেপি। গুজরাতের ৩৩টি জেলা পরিষদের মধ্যে এ বার ভোট হয়েছিল ৩১টিতে। তার মধ্যে কংগ্রেস জিতেছে ২৩টিতে। বিজেপি ৬টিতে। একটি জেলা পরিষদ ত্রিশঙ্কু হয়েছে। একটিতে ‘টাই’। অথচ গত নির্বাচনে এই ৩১টির মধ্যে ৩০টি জেলা দখল করেছিল বিজেপি। আবার ৪,৮০০ পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে যে ৩,৩০০ আসনের ‘ট্রেন্ড’ সামনে এসেছে, তার মধ্যে ২,২০০টিতে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস।

মোদীর জন্মস্থান বড়নগরেও বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। বড়নগর গুজরাতের মেহসেনা জেলায় পড়ে। মোদীর পাশাপাশি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন পটেল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রজনী পটেলও আদতে মেহসেনার বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে জেলা পরিষদে তো বিজেপি হেরেছেই, এমনকী পুরসভাও তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর এলাকা বলসার জেলার ভালুচারিতেও হেরেছে শাসক দল।

Advertisement

বিহারে বিধানসভা ভোট এবং মধ্যপ্রদেশে উপনির্বাচনের পরে মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতেও বিজেপির এমন দশা দেখে ভুরু কুঁচকোচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের কথায়, যে মোদী-হাওয়ায় ভর করে লোকসভা ভোটে মাত করেছিল বিজেপি, তা একেবারেই উধাও। ফল দেখে স্পষ্ট, গ্রামাঞ্চলের মানুষ মোদীর উন্নয়ন বা ‘অচ্ছে দিনের’ দাবিও মানতে নারাজ। এই ফলকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যসভায় নীতীশ কুমারের দলের নেতা কে সি ত্যাগী বলেছেন, ‘‘আসলে খোদ গুজরাতে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ঢিলে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘গ্রামের ফল বুঝিয়ে দিচ্ছে, লোকসভা ভোটের সময় যে মোদী মডেল তুলে ধরে ধন্য ধন্য হয়েছিল তা কতটা ফাঁপা।’’

তবে বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, এটা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের হার নয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গুজরাতের দিকে নজর দেওয়ার বিশেষ সময় পান না মোদী। তাই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন পটেলের উপর তিনি আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু আনন্দিবেনের অনেক কাজে খুশি নন মানুষ। তা ছাড়া হার্দিক পটেলের নেতৃত্বে সরকার বিরোধী পতিদার আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভোটে। ওই আন্দোলন দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন আনন্দিবেন। তবে আনন্দীবেনের দাবি, ‘‘আমি রাজ্যজুড়ে বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। তার পরেও গ্রামাঞ্চলে কেন বিজেপি হারল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ দলের আর এক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, পুর ও পঞ্চায়েত ভোট স্থানীয় বিষয়ের ভিত্তিতে হয়। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে পঞ্চায়েত ও পুরভোট সরাসরি তৃণমূল-সিপিএম লড়াইয়ে পরিণত হয়, গুজরাতে তা হয় না।

কিন্তু এই সব যুক্তি মানতে নারাজ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই। তাঁদের যুক্তি, পটেল আন্দোলনের প্রভাব নিশ্চয়ই ভোটে পড়েছে। কিন্তু সেটাই যদি বিজেপির হারের অন্যতম কারণ হতো, তা হলে শহরে এলাকায় পুরসভাগুলিতে বিজেপি ভাল করল কী ভাবে? হার্দিক পটেলের মূল শক্তি বীরঙ্গম এলাকায়। সেখানে বিজেপি জিতেছে। বরং সামগ্রিক ভাবে ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, শহর ও গ্রামের মানুষ আড়াআড়ি বিভক্ত। মূল্যবৃদ্ধি, উপর্যুপরি খরা পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্য না পেয়ে গ্রামে বিজেপির উপর চটেছেন মানুষ।

বিহার ভোটের আগেই গুজরাতে পুরভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গুজরাত সরকার তা পিছিয়ে দেয়। কংগ্রেস নেতারা তখন বলেন, বিহার
ভোটের আগে গুজরাতের অস্বস্তি এড়াতেই এই কৌশল। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শক্তিসিন গোহিল এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘কী, ঠিক বলেছিলাম কিনা! বিহার ভোটের মধ্যে এই অস্বস্তিটাই তো এড়াতে চাইছিলেন মোদী-শাহরা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement