রাহুল গাঁধী। ফাইল ছবি।
নরম বা কট্টর, কোনও ধরনের হিন্দুত্বেই তাঁর বিশ্বাস নেই বলে মন্তব্য করলেন রাহুল গাঁধী।
বিভিন্ন সময়ে নানা রাজ্যে গিয়ে তিনি যে মন্দির দর্শনে যান, সেটা নরম হিন্দুত্বের লাইন কি না, এই প্রশ্নই আজ হায়দরাবাদে করা হয়েছিল তাঁকে। তখনই কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘ধর্মস্থানে যাওয়া বা ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলায় কোনও অন্যায় নেই। নরম বা কট্টর কেন, কোনও হিন্দুত্বেই বিশ্বাস করি না।’’
ক’দিন আগেই সংসদে অনাস্থা বিতর্কে অংশ নিয়ে রাহুল বলেছিলেন, মোদী-অমিতদের দেখেই তিনি হিন্দু হওয়ার প্রকৃত অর্থ বুঝতে শিখেছেন। বুঝতে শিখেছেন, হিন্দু হওয়া মানে ভালবাসার রাস্তায় হাঁটা, ঘৃ়ণা নয়। হিন্দুধর্মকে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের লাইন থেকে আলাদা করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কপিল সিব্বলের মতো কংগ্রেস নেতারাও এ কথা বারবার বলেছেন। রাহুলের এ দিনের মন্তব্যও সেই ধারাই অনুসরণ করল বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজেপি অবশ্য রাহুলের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তাঁকে হিন্দু-বিরোধী বলে প্রমাণ করতে আবারও উঠেপড়ে লেগেছে। রাহুলের বক্তব্যকে কার্যত লুফে নিয়েছে তারা। দলের মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রকে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনই করিয়ে ফেলা হয়েছে দিল্লিতে। সম্বিৎ সেখানে বলেছেন, ‘‘রাহুল যদি বলতেন, কট্টর হিন্দুত্ব পছন্দ করেন না, তার একটা মানে থাকত। কিন্তু তিনি সাফ বলেছেন, কোনও হিন্দুত্বেই বিশ্বাস করেন না। তা হলে ভোটের সময় যে নিজের পৈতেটি বার করেছিলেন, সেটা কি ফ্যান্সি ড্রেস ছিল?’’
ধর্মবিশ্বাসের প্রশ্নে রাহুলকে ব্যক্তিগত আক্রমণের রেওয়াজ অবশ্য বিজেপিতে অনেক দিনই। এক সময়ে তারা সনিয়াকে বিদেশিনি বলে অনেক তোপ দেগেছে। সেই সূত্রে রাহুলকে রোমান ক্যাথলিক বলে প্রচার চালানোর চেষ্টাও হয়েছে। গত বছরই গুজরাত ভোটের আগে সোমনাথ মন্দিরের রেজিস্টারে ‘অ-হিন্দু’ দর্শনার্থীদের তালিকায় রাহুল আর আহমেদ পটেলের নাম নিয়ে ঝড় তোলা হয়েছিল। এক দিকে রাহুল কেন মন্দিরে মন্দিরে ঘুরছেন, কেন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন, সে প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে রাহুলের হিন্দু পরিচয় নিয়ে
ধারাবাহিক আক্রমণ চলছে। ঠিক যে ভাবে সম্প্রতি ‘মুসলিম পার্টি’ মন্তব্যটি আংশিক উদ্ধৃত করে হইচই বাধানো হয়েছিল।
রাহুল এক সময় ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টিমোথি রোমারকে বলেছিলেন, লস্করের চেয়ে হিন্দু উগ্রবাদকে বেশি বিপজ্জনক মনে করেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে বিজেপি বলতে চাইছে, হিন্দুদের দুর্নাম করাই কংগ্রেসের কাজ। তারা হিন্দু সন্ত্রাসবাদ তত্ত্বের প্রবর্তক। আজ সম্বিৎ আরও চাঁছাছোলা ভাবে বলতে থাকেন, ‘‘রাহুল কী ভেবেছেন! যখন মনে হবে হিন্দুত্ব করবেন, নিজেকে শিবভক্ত বলবেন, যখন দরকার হবে হিন্দুত্ব ঝেড়ে ফেলবেন!’’
কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা উত্তরে শুধু বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন কথা বলে নিজের প্রচার করাই সম্বিতের অভ্যাস। তার কী জবাব দেব?’’ দলের নেতারা ঠিক করেছেন, রাহুল কোন পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক কী বলেছেন, তা না জেনে প্রতিক্রিয়া জানানোই হবে না।