নীতীশ নন, বিহার ভোটে লালু প্রসাদকেই ‘চাঁদমারি’ করে আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপি।
নীতীশ-লালু জোটের মধ্যে ‘বিভেদ নীতি’-র লক্ষ্যেই যে বিজেপির প্রচারে আরজেডি-প্রধানের শাসনকালের ‘জঙ্গলরাজ’ বার বার উঠবে, সেই ইঙ্গিত আগেই ছিল। আজ দলের ইস্তাহার প্রকাশ করতে এসে তা আরও স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যই ছিলেন লালু। নীতীশকে আক্রমণ তো দূরের কথা, দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর নাম পর্যন্ত মুখে আনলেন না জেটলি! তার মানে কি নীতীশকে তিনি উপেক্ষা করলেন? ঘটনা হল, জেটলির সঙ্গে নীতীশের ‘সখ্য’ রাজনৈতিক মহলে অজানা নয়। তবে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, মহাজোটের শরিকদের মধ্যে লালুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো সহজ। তিনি পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। আদালতের রায়ে নির্বাচনী ময়দান থেকে নির্বাসিত। পাশাপাশি ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়েও তাঁকে নিশানা করা সহজ বলেই মনে করেন বিহারের বিজেপি নেতারা। একই সঙ্গে তাঁদের মাথায় রাখতে হচ্ছে, এত কিছুর পরেও লালু নিজস্ব ‘ভোট ব্যাঙ্ক’ রয়েছে। সেই কারণেই লাগাতার আক্রমণে লালুকে টালমাটাল করে তাঁর ভোট ব্যাঙ্কে চিড় ধরাতে পারলে বিজেপির লাভ।
আজ ইস্তাহার প্রকাশ করতে গিয়ে ফের গোধরা প্রসঙ্গ সামনে টেনে আনলেন জেটলি। রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে গোধরা কাণ্ড নিয়ে লালু ‘মিথ্যা রিপোর্ট’ তৈরি করিয়েছিলেন বলে আজ অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তী তদন্তে সেই তা ধরা পড়েছে বলেও দাবি জেটলির। দলের ইস্তাহার তথা এ দিন ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে লালুর শাসনকালকে ‘জঙ্গল রাজ’ বলে কথা শুরু করেন জেটলি। তার পরে সুর চড়িয়ে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে জেটলি বলেন, ‘‘সমাজকে ভাগ করার রাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক।’’
নির্বাচনী প্রচারে জাতপাত নিয়ে মন্তব্য করে ইতিমধ্যেই তোপের মুখে পড়েছেন লালুপ্রসাদ। বৈশালী জেলার গঙ্গাব্রিজ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও হয়েছে। বিহারের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের রিপোর্ট পাওয়ার পর আজ নির্বাচন কমিশন লালুকে তাঁর মন্তব্যের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস ধরিয়েছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের বিরুদ্ধে সংরক্ষণের প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিলেন লালু। এ দিন সংরক্ষণ প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি, ‘‘সংরক্ষণ আজও এই সমাজে প্রয়োজনীয়। পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষকে এক সারিতে আনতে সংরক্ষণ জরুরি। এ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে।’’
জেটলির দাবি, বিহারে বিজেপির সরকার তৈরি হলে ‘জঙ্গলরাজ’ শেষ হবে। পাশপাশি কংগ্রেস, আরজেডি এবং জেডিইউ জোটের কাছে কোনও উন্নয়নের মডেল নেই বলেও দাবি তাঁর। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, নীতীশ কুমারের প্রথম পাঁচ বছরের জোট সরকার আইনের শাসনে জোর দিয়েছিল। ফলে ২০১০-এ বিপুল ভাবে ক্ষমতায় ফিরেছিল তারা। সেই জোট ভাঙতেই বিহারে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে।
জেটলির অনুষ্ঠানের পরেই বিজেপির ইস্তাহার নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নামেন মহাজোট নেতারা। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা, জেডিইউ সাংসদ পবন বর্মা এবং আরজেডি মুখপাত্র মনোজ ঝা যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। লালুর পাশে দাঁড়িয়ে রণদীপ বলেন, ‘‘বিজেপির বর্তমান জোট-সহযোগী, লোক জনশক্তি পার্টির নেতা রামবিলাস পাসোয়ান গোধরা কাণ্ডের পরে বিজেপিকে বলেছিল ‘ভারত জ্বালাও পার্টি’! তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেই সব কিছুর উত্তর পাবেন বিজেপি নেতৃত্ব!’’