বিপান চন্দ্র প্রয়াত

মারা গেলেন ইতিহাসবিদ বিপান চন্দ্র। শনিবার ভোর ছ’টায় গুড়গাঁওয়ে নিজের বাড়িতে প্রয়াত হন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৬। আধুনিক ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে তাঁর গবেষণা উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মার্ক্সবাদী ইতিহাসচর্চার বড় নাম বিপান চন্দ্র। তিনিই আবার মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে নিয়ে গবেষণার অন্যতম দিশারী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

গুড়গাঁও শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫১
Share:

মারা গেলেন ইতিহাসবিদ বিপান চন্দ্র। শনিবার ভোর ছ’টায় গুড়গাঁওয়ে নিজের বাড়িতে প্রয়াত হন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৬। আধুনিক ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে তাঁর গবেষণা উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মার্ক্সবাদী ইতিহাসচর্চার বড় নাম বিপান চন্দ্র। তিনিই আবার মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে নিয়ে গবেষণার অন্যতম দিশারী।

Advertisement

দীর্ঘদিন নানা রোগে ভুগছিলেন বিপান। ছিল বার্ধক্যজনিত সমস্যাও। বছর চারেক আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আরও ভেঙে গিয়েছিল স্বাস্থ্য। তবু কাজ থেমে থাকেনি। সম্প্রতি আত্মজীবনী লিখতে কলম ধরেছিলেন। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভগৎ সিংহের জীবনী লেখার কাজ। দু’টো বইয়ের খসড়াই প্রায় তৈরি, জানালেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিত্য মুখোপাধ্যায়। তবে নিজের জীবনদর্শনকে যে ভাবে বইয়ের মলাটে দেখতে চেয়েছিলেন, সেটা আর দেখে যাওয়া হল না পদ্মভূষণ জয়ী প্রখ্যাত এই ইতিহাসবিদের।

ঔপনিবেশিকতা থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন, সমসাময়িক ইতিহাস থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল ‘ইন দ্য নেম অব ডেমোক্রেসি: দ্য জেপি মুভমেন্ট অ্যান্ড দ্য ইমার্জেন্সি’-র লেখকের। তাঁর লেখা অন্য বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড গ্রোথ অব ইকনমিক ন্যাশনালিজম’, ‘ন্যাশনালিজম অ্যান্ড কলোনিয়ালিজম ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, ‘ইন্ডিয়া সিনস ইন্ডিপেনডেন্স’, ‘স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেনডেন্স’ এবং অবশ্যই ‘দ্য মেকিং অব মডার্ন ইন্ডিয়া: ফ্রম মার্ক্স টু গাঁধী’। বামপন্থী বিপান গভীর ভাবে যুক্ত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-র সঙ্গে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠেই গাঁধীর দর্শনকে নতুন আলোয় চিনিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’-এর জন্য ‘মডার্ন ইন্ডিয়া’ লিখেছিলেন বিপান। প্রায় তিন দশক পাঠ্য ছিল সেটি। ১৯৯৯ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এসে সেই বই বাতিল করে। তাঁর বই কিন্তু ব্রাত্য হয়ে থাকেনি। বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়ে ফের ছাপা হয়।

১৯২৮ সালে হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় জন্ম হয় বিপান চন্দ্রের। লাহৌরের ফরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে পড়াশোনার পর চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিল্লির হিন্দু কলেজে পড়িয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। আলাপ হয় ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের সঙ্গে। রোমিলা তখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। জেএনইউ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর দু’জনেই চলে যান সেখানে। এস গোপাল ও সতীশ চন্দ্রকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সেন্টার ফর হিস্টোরিকাল স্টাডিজ’। রোমিলা আজ বললেন, “দু’জনের চিন্তাভাবনায় অনেক ফারাক ছিল। তাই এক-একটা বিতর্ক সমৃদ্ধ করত আমাদের।” ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের সদস্য হয়েছিলেন বিপান চন্দ্র। ছিলেন ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের চেয়ারম্যানও। পাশাপাশি ‘এনকোয়্যারি’ নামে পত্রিকার সূচনা করেছিলেন। আর ক্লাসরুমে...? বিপান চন্দ্রের একাধিক ছাত্রের কথায় “ক্লাসরুমে তিনি ছিলেন পারফর্মার। ওঁর পড়ানোয় ইতিহাস যেন জীবন্ত হয়ে উঠত। ছাত্রদের চুম্বকের মতো টেনে আনত ক্লাসে।” তাই গুণগ্রাহীদের কথায়, “ওঁর মৃত্যুতে একটা যুগের অবসান হল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement