Bilkis Bano

বিলকিস বানো মামলায় ১১ ধর্ষক এবং খুনির মুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি, দিন জানাল সুপ্রিম কোর্ট

গত ১৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দেবগড় বারিয়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। পরে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ আবেদনে সাড়া দেয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ২০:১১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

গুজরাতে দাঙ্গাপর্বে দেবগড় বারিয়ায় বিলকিস বানো মামলায় গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডে অপরাধী ১১ জনের সাজার মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে আগামী ৭ অগস্ট। ওই অপরাধীদের মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতে সোমবার এ কথা জানিয়েছে বিচারপতি বিচারপতি নাগরত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইয়াঁর বেঞ্চ। বিলকিস এবং অন্য আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী ইন্দিরা জয় সিংহ এবং বৃন্দা গ্রোভার শুনানিতে অংশ নেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি শাসিত গুজরাত সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করে। এর পরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় শীর্ষ আদালত। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

মে মাসে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিচারপতি নাগরত্নের বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় বলেছিল, অপরাধীরা শুনানি এড়াতে চেয়েছেন। পাশাপাশি, দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘যেমন আপেলের সঙ্গে কমলালেবুর তুলনা হয় না, তেমনই ৩০২ ধারার সাধারণ খুনের মামলার সঙ্গে এখানে নির্যাতিতার প্রতি অত্যাচার এবং গণহত্যার অপরাধের তুলনা চলতে পারে না।’’

Advertisement

বস্তুত, ১১ জনের মুক্তির পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হল, এ নিয়ে বিতর্ক বাধে। বিতর্কের মধ্যেই গুজরাত সরকার জানায় যে, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক ও খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল।

২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত।

মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়। গত ১৫ অগস্ট ওই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। গুজরাত সরকার ১১ জন ধর্ষকের জেলের ভিতরে ‘ভাল আচরণের’ দাবি করলেও সরকারি তথ্য ‘অন্য কথা’ বলছে বলে অভিযোগ। ওই ১১ জন যখন বিভিন্ন সময় প্যারোলে জেলের বাইরে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন।

এর আগের শুনানির দিন বিলকিস মামলার ১১ জন অপরাধীকে কেন সময়ের আগেই মুক্তি দেওয়া হল, তা নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং গুজরাতের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ‘‘অপরাধীদের মুক্তির আগে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত ছিল।’’ এ নিয়ে পরবর্তী শুনানির সময় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে এই মুক্তি সংক্রান্ত নথিও তলব করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রাথমিক ভাবে সেই সব নথি দিতে অস্বীকার করে কেন্দ্র এবং গুজরাত সরকার। সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার কথাও জানায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি নিয়ে অনড় থাকার পরে এ দিন কেন্দ্র এবং গুজরাত সরকার আদালতে জানিয়েছে, ওই ১১ জনের মুক্তি সংক্রান্ত নথি জমা দিতে প্রস্তুত তারা। মামলাটি জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুনানির জন্য উঠবে। গত ৩০ জুন বিচারপতি জোসেফ অবসর গ্রহণ করায় সোমবার নতুন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement