জোটের জট এখনও কাটেনি। তবু তার মধ্যেই দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। আজ দিনভর জেডিইউয়ের জেলা ও রাজ্য নেতাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী-নিবাসে বৈঠক করেন তিনি। আজকের বৈঠকে বিশদে আলোচনা হয় পূর্ব চম্পারণ, পশ্চিম চম্পারণ ও সীতামঢ়ী জেলা নিয়ে। এই তিন জেলার বিধানসভাগুলির বর্তমান পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। জোট হলে কী করতে হবে এবং না হলেই বা কোন পথে এগোতে হবে, তা নিয়েও দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন নীতীশ।
পাশাপাশি, আজ নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করেন লালুপ্রসাদের দূত তথা আরজেডি বিধায়ক ভোলা যাদব। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে লালুপ্রসাদের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন ভোলা। রাবড়ী দেবী মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই বিহারের রাজনীতিতে তিনি লালুপ্রসাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। তবে ঠিক কী নিয়ে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে তা বলতে চাননি তিনি। নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করার পরে ভোলা যাদব বলেন, ‘‘জোট নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে। আশা করি ভালই হবে।’’
তবে লালুর খাস-দূত ভোলা যাদব জোট নিয়ে আশাবাদী হলেও এ দিন ফের নীতীশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আরজেডির সহ-সভাপতি রঘুবংশ প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘জোটের নেতা হিসেবে কোনও ভাবেই নীতীশ কুমারকে মেনে নেওয়া হবে না। জেডিইউ-র নেতাকে আমরা কেন মানব!’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘জোটের নেতা কে হবে, তা জেডিইউ ঠিক করবে না। আমাদের নেতা হওয়ার লোকের অভাব নেই।’’ উল্লেখ্য, গত কালই রঘুবংশ বলেছেন, ‘‘লালুপ্রসাদ ছাড়াও আরজেডিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য প্রায় ডজনখানেক নেতা রয়েছেন। নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করার কোনও দরকারই নেই। এ ছাড়া, বিজেপি আমাদের বিরোধী। তাঁরা তো কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেনি। আমরা কেন করতে যাব।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, লালুপ্রসাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই তিনি এমন কথা বলছেন। অন্য অংশ মনে করেন, লালুর সঙ্গে রঘুবংশের সম্পর্ক দীর্ঘ দিন ধরেই তিক্ত। লালুকে যখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে জেলে জেতে হয় তখন সেই পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন রঘুবংশ। কিন্তু লালু তাঁর স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দেন। রাবড়ী দেবীকে রঘুবংশ কখনওই মেনে নিতে পারেননি। এ বার লালু এই দৌড়ে নেই। দণ্ডিত অপরাধী হিসেবেই লালু মুখ্যমন্ত্রীর দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ফের নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে নিজেকে সামিল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এই বিবৃতিগুলিতে সেই ইঙ্গিতই ফুটে বেরোচ্ছে বলে রাজ্য-রাজনীতির কুশীলবদের দাবি।
তবে রঘুবংশের বক্তব্যে বেজায় চটেছে জেডিইউ। দলের রাজ্য সভাপতি বশিষ্টনারায়ণ সিংহ বলেন, ‘‘বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত আরজেডি নেতাদের। নীতীশ কুমার শুধু বিহারের নয়, সারা দেশের কাছেই গ্রহনযোগ্য নেতা। তাঁর আমলে বিহার সব দিক থেকে উন্নতি করেছে। তাই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেই নির্বাচনে লড়া উচিত।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন নীতীশ মন্ত্রিসভার সদস্য, খাদ্যমন্ত্রী শ্যাম রজক। রঘুবংশের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির পে রোলে থাকা লোকেদের মতো করে কেউ কেউ কথা বলছেন। এর ফলে জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ তবে রঘুবংশের সুরে সুর মিলিয়েছেন জেডিইউয়ে নীতীশ-বিরোধী হিসেবে পরিচিত, তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য, পরিবহণ মন্ত্রী রামাইয়া রাম। তিনি বলেন, ‘‘জোট করে ভোটে যাওয়া উচিত। জেতার পরে যে দলের সদস্য সংখ্যা বেশি থাকবে মুখ্যমন্ত্রী সেই দল থেকেই হবে।’’