আইএনএস রাজপুত থেকে ছোড়া হচ্ছে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র (প্রতীকী ছবি / সংগৃহীত)
নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র এবং এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার নিয়ে এ যাবৎ কালের বৃহত্তম সামরিক মহড়ায় অংশ নিল ভারতীয় নৌসেনা। আরব সাগরের বুকে ভারতীয় নৌসেনা যে বিপুল শক্তি প্রদর্শন করল, তা আগে কখনও হয়নি। ট্রপেক্স-২০১৭ নামে এই মহড়া শুরু হয়েছিল ২৪ জানুয়ারি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেও তা চলছে। নাম না করলেও মূলত চিনকেই বার্তা দেওয়া হয়েছে এই বৃহত্তম নৌ-মহড়া থেকে। কারণ নৌসেনা সাফ জানাল, ‘শত্রু সাবমেরিন’কে যে কোনও মুহূর্তে ধ্বংস করতে ভারত কতটা প্রস্তুত, তা খতিয়ে দেখা এই মহড়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
শত্রু সাবমেরিন বলতে যে চিনা সাবমেরিনের কথাই বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত। ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলে চিনা সাবমেরিনের আনাগোনা সাম্প্রতিক কালে খুব বেড়ে গিয়েছে। কখনও আন্দামানের কাছে, কখনও বঙ্গোপসাগরের অন্য কোনও প্রান্তে, কখনও আরব সাগরে লুকিয়ে হানা দিচ্ছে চিনা সাবমেরিনগুলি। ভারতীয় জলসীমার খুব কাছে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকেও যে চিনা সাবমেরিন ঘুরে এসেছে, উপগ্রহ চিত্রে তা ধরা পড়েছে। চিন পাকিস্তানকে নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন লিজ দিতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।
অভিযানে নৌসেনার বিমানবহর। ছবি সৌজন্য: ভারতীয় নৌসেনা।
চিনের লক্ষ্য গোটা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাবমেরিন পাঠিয়ে এলাকায় নিজেদের নৌসেনার আধিপত্য কায়েম করা, ভারতকে সব দিক দিয়ে ঘিরে ফেলা এবং ভারতীয় নৌসেনার সব গতিবিধির খবর রাখা। ভারতীয় নৌসেনা এ বারের মহড়ায় বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল, প্রয়োজন পড়লেই চিনা সাবমেরিনগুলিকে বেকায়দায় ফেলতে ভারত সব রকম ভাবে প্রস্তুত।
অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার বা সাবমেরিন বিধ্বংসী কৌশলে ভারতীয় নৌসেনা কতটা দক্ষ, তার বিশদ প্রদর্শনী হয়েছে গোয়া উপকূল থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে আয়োজিত এই মহড়ায়। কামোরতা ক্লাসের অ্যান্টি সাবমেরিন ফ্রিগেট অংশ নিয়েছিল ট্রপেক্স-২০১৭-তে। অংশ নিয়েছিল কলকাতা ক্লাসের গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ারও। পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্রুজ মিসাইল হিসেবে বিবেচিত ব্রহ্মসকে এই মহড়ায় ব্যবহার করা হয়েছে। গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে ব্রহ্মস এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে লক্ষ্যবস্তুকে বিধ্বস্ত করার প্রতিটি মহড়ায় ভারতীয় নৌসেনা অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর।
যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির বিন্যাস নৌবহরে। ছবি সৌজন্য: ভারতীয় নৌসেনা।
মহড়া অবশ্য শুধু জলে সীমাবদ্ধ ছিল না। আকাশপথেও যে আক্রমণ আসতে পারে এবং নৌসেনা যে তার মোকাবিলাতেও প্রস্তুত, মহড়ায় তারও প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। পুণের লোহেগাঁও বিমানঘাঁটি থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানগুলি উড়ে গিয়েছে গোয়া উপকূলের দিকে। মহড়ায় এই সুখোই ফাইটারগুলি শত্রু পক্ষের বিমানের ভূমিকা পালন করেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল নৌসেনার রণতরীতে আঘাত হানা। কিন্তু ভারতীয় নৌসেনার মিগ-২৯কে ফাইটারগুলির দায়িত্ব ছিল সুখোই-৩০ ফাইটারের ঝাঁককে রুখে দেওয়া। রাডারে সুখোই হানার সঙ্কেত মিলতেই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রমাদিত্যের ডেক থেকে গর্জন করে আকাশে উড়তে শুরু করে মিগ-২৯কে ফাইটারগুলি। মাঝ আকাশে পরস্পরের মুখোমুখি হয় মিগ এবং সুখোই। ভারতীয় রণতরীগুলিকে প্রতিপক্ষের বিমানহানা থেকে রক্ষার কাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পরিচয় দেয় নৌসেনা।
আরও পড়ুন: ভারতকে ভয় পায়, তাই সন্ত্রাসে মদত দেয়: মার্কিন রিপোর্টে কড়া পাক-নিন্দা
ভারতের নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন আইএনএস চক্র-ও বিধ্বংসী হামলা চালিয়েছে মহড়ায়। ভারতীয় সাবেমেরিনগুলিই প্রতিপক্ষ সাবমেরিনের ভূমিকা পালন করছিল। মহড়ায় আইএনএস চক্র যে তীব্র গতি এবং অসামান্য কৌশলের ছাপ রেখেছে, তা চিনকে চিন্তায় রাখার পক্ষে যথেষ্ট বলে নৌসেনার দাবি।
আরও পড়ুন: বেনজির পদক্ষেপ চিনের! স্পষ্ট হুঁশিয়ারি ভারত, জাপান, আমেরিকাকে
নৌসেনার হাতে থাকা আইএল-৩৮ এসডি মেরিটাইম রিকনেসাঁ এয়ারক্র্যাফ্টও অংশ নিয়েছিল মহড়ায়। আকাশ থেকে অ্যান্টি-শিপ মিসাইল কেএইচ-৩৫ ছুড়ে প্রতিপক্ষ জাহাজকে আরব সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে আইএল-৩৮ এসডি।