ফাইল চিত্র।
নদীতে আটকে পড়া হাতি উদ্ধারের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গত কাল মৃত্যু হয়েছিল ওড়িশার সাংবাদিক অরিন্দম দাসের। আজ উদ্ধার হল ওই দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য সীতারাম মুর্মুর দেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, বুনো হাতি উদ্ধার করতে গিয়ে গত কাল কটকের অদূরে মহানদীর উপরে মুন্ডালি বাঁধের কাছে স্রোতের টানে উল্টে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর নৌকাটি। সেটিতে বাহিনীর ৫ সদস্যের সঙ্গে ছিলেন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক অরিন্দম ও চিত্র সাংবাদিক প্রভাত সিংহও। বাহিনীর ৩ সদস্য, অরিন্দম ও প্রভাতকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় অরিন্দমকে।
অরিন্দমের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বুনো হাতি উদ্ধারের মতো বিপজ্জনক অভিযানে কেন বাহিনীর বাইরের দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, অভিযানে অংশ নিতে পারেন শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত কর্মীরাই। রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি সঞ্জীব মারিকের মতে, সাংবাদিকদের যতই উৎসাহ থাক, এই অভিযানে তাঁদের সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে ভুল করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এই মৃত্যু চাইলে এড়ানো যেত।
অরিন্দমের জনপ্রিয়তার মূলে ছিল একদম ‘গ্রাউন্ড জ়িরো’ থেকে খবর পরিবেশন করা। যে কোনও বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় হোক বা পুলিশ-মাওবাদী সংঘর্ষ অথবা হাড় হিম করা অপরাধ কিংবা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বন্যপ্রাণী উদ্ধার— সব রকম খবরই একেবারে ঘটনাস্থল থেকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরতেন ৩৯ বছরের এই যুবক। ওড়িশার প্রথম সারির একটি চ্যানেলের চিফ রিপোর্টার ছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে ফুলেফেঁপে ওঠা মহানদীতে আটকে পড়া একটি হাতির উদ্ধারের খবর পেয়ে হাজির হন সেখানে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সঙ্গে একই নৌকায় চড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন একেবারে মাঝনদীতে।
বন দফতর জানিয়েছে, মোট ১১টি হাতির একটি বড় দলের মধ্যে ছিল আটকে পড়া হাতিটি। নদী পার হতে গিয়ে কোনও ভাবে দলছুট হয়ে পড়ে সেটি। প্রবল বিদ্যুতের টানে আটকে পড়ে স্রোতের মধ্যে। ডাক শুনে গ্রামবাসীরাই প্রথম লক্ষ্য করে সেটিকে। উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সেই দলের সঙ্গেই যান অরিন্দম। কিন্তু প্রবল স্রোতে উল্টে যায় তাঁদের নৌকা।
বাকিদের উদ্ধার করা গেলেও দুর্ঘটনার পরে নিখোঁজ ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য সীতারাম মুর্মু। আজ ধবলেশ্বরের কাছে কাখাড়ি গ্রামে উদ্ধার হয় তাঁর দেহটি। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, শুক্রবারের ওই দুর্ঘটনার পরে বন্ধ করে দেওয়া হয় উদ্ধার অভিযান। হাতিটিকে পরে আর দেখা যায়নি।
অরিন্দমের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ওড়িশা সরকার। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। তাঁর টুইট, ‘‘নবীন সাংবাদিক অরিন্দম দাসের মৃত্যুতে দুঃখিত। ওড়িশার সাংবাদিকতার জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। ওঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’’