গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
বিভাজন যে রয়েছে, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। কারও সমস্যা অধীরকে নিয়ে। কারও আপত্তি বামেদের সঙ্গে সমঝোতায়। কেউ কট্টর তৃণমূল বিরোধী। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকের দিন যত এগিয়ে আসছিল, প্রদেশ কংগ্রেসে অস্বস্তিও ততই বাড়ছিল। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুম’-এও বহাল রইল সে অস্বস্তি। ফলে একসঙ্গে বসে খোলাখুলি আলোচনা হল না। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা সকলেই আলাদা আলাদা করে দেখা করলেন রাহুল গাঁধীর সঙ্গে।
বাংলায় কোন পথে এগোবে দল, সংগঠনে রদবদল হবে কি না— সে সব নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এ দিনের বৈঠকে হয়নি। সিদ্ধান্ত কী হতে পারে, তার কোনও আভাসও মেলেনি। কারণ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী নিজে কিছুই বলেননি এ দিন, শুধু শুনেছেন। খবর কংগ্রেস সূত্রে।
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে ডাক পেয়েছিলেন প্রায় সব শীর্ষনেতাই। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী, দুই প্রাক্তন সভাপতি সোমেন মিত্র ও প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান তো ছিলেনই। ছিলেন রাজ্যের বর্তমান ও প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদরা এবং কংগ্রেস বিধায়করা। ছিলেন কংগ্রেসের গণসংগঠনগুলির প্রদেশ নেতারাও। সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তরফে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী নিজে এবং বাংলার পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ।
আরও পড়ুন: মমতা-সঙ্গ চান ডালু ও মৌসম
কী ভাবে আলোচনা চান বাংলার নেতারা? সবাই মিলে, নাকি আলাদা আলাদা। জানতে চেয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। বেশ কয়েক জন সিনিয়র নেতা আলাদা বা একান্ত আলাপচারিতার কথা বলেন। রাহুল তাতেই রাজি হয়ে যান বলে খবর।
৩৫-৪০ জনের প্রতিনিধি দল, তাই কারও সঙ্গেই দীর্ঘ কথোপকথন সম্ভব ছিল না। স্থির হয় নিজেদের বক্তব্য আলাদা করে সভাপতিকে জানানোর জন্য প্রত্যেকে তিন মিনিট করে সময় পাবেন। সে ভাবেই একে একে সকলে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন রাহুলের সামনে। গৌরব গগৈও সেখানে সারাক্ষণই ছিলেন। কোনও কোনও সিনিয়র নেতার ক্ষেত্রে তিন মিনিটে আলোচনা শেষ হয়নি, কিছুটা দীর্ঘায়িত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফের উন্নাও! জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে শ্লীলতাহানি, ভিডিয়ো ভাইরাল
কী আলোচনা হল রাহুল গাঁধীর সঙ্গে? প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজ্যসভার সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘তিনটে পয়েন্টে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রথমত, রাহুল গাঁধী জোটের বিষয়ে আমার মতামত জানতে চাইছিলেন। আমি বলেছি, কেউ এখনও জোটের প্রস্তাব আমাদের দেয়নি। এখনই এ নিয়ে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, রাহুল গাঁধী সংগঠনের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, সংগঠনের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, বাংলায় কংগ্রেস খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। তৃতীয়ত, তিনি জানতে চেয়েছিলেন, সংগঠন কেন দুর্বল? আমি জানিয়েছি,আমরা বাংলায় ঐক্যবদ্ধ নই বলেই ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছি।’’
জোট নিয়ে ভাবার সময় এখনও আসেনি বলে মনে করলেও, জোট হলে কার সঙ্গে হওয়া উচিত, সে বিষয়ে কিন্তু নিজের অবস্থান রাহুলের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রদীপ। ‘‘জোট যদি করতেই হয়, তা হলে এমন কারও সঙ্গেই করা উচিত, যাতে আমাদের কিছু লাভ হবে। যাদের সঙ্গে জোট করে কোনও লাভ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। রাহুল গাঁধীকে আমি এ কথাই বলেছি।’’
আরও পড়ুন: আনন্দের ঢেউ! ত্রিপুরায় গণপিটুনি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, বিপ্লব আছেন বিপ্লবেই
প্রদীপ ভট্টাচার্য যে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিপরীত অবস্থানে রয়েছেন, তিনি এবং সোমেন মিত্র যে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করছেন, সে খবর কংগ্রেস সূত্রে বেশ কিছু দিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছিল। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে প্রদীপ ভট্টাচার্য যা বললেন,তাতে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রস্তাব তিনি রাহুল গাঁধীর সামনে রেখেছেন, এমন কোনও কথা সরাসরি এই কংগ্রেস সাংসদ এ দিন বলেননি। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘‘বামেদের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের কোনও লাভ হবে বলে আমি মনে করি না।’’
শুধু সোমেন-প্রদীপ নন, দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) এবং উত্তর মালদহের কংগ্রেস সাংসদ তথা মালদহ জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূরও তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে প্রকাশ্যেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: সাড়ে চার ঘণ্টায় তৈরি হল সাবওয়ে, ফের চমক ভারতীয় রেলের, দেখুন ভিডিয়ো
রাজ্যের আর এক কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতামত জানা যায়নি। জঙ্গিপুর থেকে কংগ্রেসের টিকিটে দু’বার অভিজিৎ নির্বাচিত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তার বাইরে কংগ্রেস বা রাজনীতির সঙ্গে অভিজিতের যোগ কতটুকু, তা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসেই গুঞ্জন বিস্তর। অভিজিতকে বাদ রাখলে এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত অধিকাংশ কংগ্রেস সাংসদই যে এখন তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যাওয়ার পক্ষে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অধীর চৌধুরী ছাড়া অন্য কোনও সাংসদ তৃণমূলের বিরোধিতা করতে প্রস্তুত নন। তবে বিধায়কদের মধ্যে অধিকাংশই এখনও অধীর চৌধুরীর পক্ষে রয়েছেন বলেই খবর। কংগ্রেস বিধায়ক দলের নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের সঙ্গে অধীরের ব্যক্তিগত সমীকরণ খুব মসৃণ নয়। তবে তৃণমূল বিরোধিতার প্রশ্নে অধীর এবং মান্নান একই মতামত দিয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে।