কেউ কেউ ভেবেছিলেন, শাপে বর হবে! ত্রিপুরায় বিজেপির হাতে পর্যুদস্ত হওয়ার ধাক্কায় সিপিএমে হয়তো কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে স্বর জোরালো হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আরও কট্টরপন্থী অবস্থান নিল কেরলের সিপিএম। আর ঠিক বিপরীত বিন্দুতে থেকে পার্টি কংগ্রেসের খসড়া দলিলের উপরে হাজার হাজার সংশোধনী পাঠাল দলের বঙ্গ ব্রিগেড!
পরিস্থিতি যা— এপ্রিলে হায়দরাবাদে বাংলা বনাম কেরল সিপিএমের সম্মুখ সমর অনিবার্য!
রাজ্য সম্মেলন থেকে নবগঠিত কেরল সিপিএমের রাজ্য কমিটি বৈঠকে বসে দ্রুত প্রস্তাব নিয়েছে, কোনও ভাবেই কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতা চলবে না। দু’মাস আগে কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেই দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির উদারপন্থী লাইন খারিজ হয়েছিল ভোটাভুটিতে। প্রকাশ কারাটের বেঁধে দেওয়া অ-কংগ্রেস লাইনই রয়েছে পার্টি কংগ্রেসের খসড়া দলিলে। পিনারাই বিজয়ন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনদের কেরল সিপিএম বরং সেই বাঁধনকে আরও আঁটোসাঁটো করতে চায়! এবং তারা হাতিয়ার করেছে ত্রিপুরার ভোটকেই!
কেরলের নতুন রাজ্য কমিটিতে এ বার রাখা হয়নি ভি এস অচ্যুতানন্দন শিবিরের প্রায় কাউকেই। কারাট-বিজয়ন শিবিরই সেখানে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ। তিরুঅনন্তপুরমে নতুন রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠকে তাঁরাই প্রশ্ন তুলেছেন, যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব ধুলোয় মিশছে, তারা কী ভাবে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে নেতৃতত্ব দেবে? তাঁরা উদাহরণ দিয়েছেন, ত্রিপুরায় কংগ্রেস ৪০% ভোট হারিয়েছে এবং সেই ভোট পুরোটাই পেয়ে বিজেপি বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করেছে। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর এবং ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত গিয়েছে! রাজ্য কমিটিতে মাত্র দু’জন বলেছিলেন, মধ্যপ্রদেশ বা রাজস্থানে তো কংগ্রেসই বিজেপি-কে হারাচ্ছে! গুজরাতেও বিজেপির আসন কমিয়েছে কংগ্রেসের জোট। কিন্তু তাঁদের মত কল্কে পায়নি। পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধি বাছাইয়েও ইয়েচুরিপন্থীদের রাখেননি বিজয়নেরা।
ঠিক এর উল্টো প্রক্রিয়া চলছে বাংলায়। পার্টি কংগ্রেসের জন্য সংশোধনী জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। দলীয় সূত্রের খবর, সময়সীমা ফুরনোর আগেই প্রায় ২৮ হাজার সংশোধনী পাঠানো হয়েছে বাংলা থেকে। খসড়া দলিলের ‘রাজনৈতিক লাইন’ অংশে ২.১১৫ (২) অনুচ্ছেদে কংগ্রেস সম্পর্কে যা লেখা আছে, সেই লাইন পুরোপুরি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েই অজস্র সংশোধনী হয়েছে। কিছু সংশোধনী আবার কেরল লাইনেও আছে। রাজ্য থেকে নির্বাচিত ১৭৫ জন প্রতিনিধির মধ্যেও জোট-বিরোধী কিছু সংখ্যা আছে। রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং পলিটব্যুরোর সদস্য বিমান বসু দলের বিভিন্ন শাখার সদস্যদের মুখোমুখি হয়ে খসড়া দলিল ব্যাখ্যা করছেন এবং কৌশলে বার্তা দিচ্ছেন।
কেরল সিপিএমের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘কারাট আর ইয়েচুরি, দুই ব্যক্তির লড়াইয়ের প্রশ্ন নয় এটা। কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা হলে কেরলে বাম-বিরোধী গোটা পরিসরটা বিজেপি দখল নেবে। সেটা হতে দেওয়া যায় না!’’ ত্রিপুরায় রাজ্য সম্মেলন হবে পার্টি কংগ্রেসের পরে। ক্ষমতাচ্যুত ওই রাজ্য এ বার হায়দরাবাদে গিয়ে ইয়েচুরির পাশে দাঁড়াবে কি না, শ্যেনদৃষ্টি রাখছে যুযুধান দুই শিবিরই!