শবরীমালা ইস্যুতে বিজেপি সমর্থকদের প্রতিবাদ।—ছবি পিটিআই।
শবরীমালা ঘিরে বাম বনাম বিজেপির তীব্র সংঘাতের মাঝেই বিতর্কে উঠে আসছে কংগ্রেসের অবস্থান!
লোকসভা ভোটের আগে শবরীমালা বিতর্কের ফায়দা হাতছাড়া করতে রাজি নয় কেরলের কংগ্রেস। বাম-বিরোধী ভাবাবেগের হাওয়া টানতে তাই শবরী-প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্ডিন্যান্স জারির আর্জি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হতে চাইছে রাজ্যের কংগ্রেস সাংসদদের একটি প্রতিনিধিদল। রাজ্য কংগ্রেসের এমন আচরণে অবিলম্বে রাশ টানতে দলের হাইকম্যান্ডের হস্তক্ষেপ চাইছে সিপিএম।
আয়াপ্পা দর্শনে দুই মহিলার মন্দিরে প্রবেশের প্রতিবাদে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের পাশাপাশিই কেরলে রাস্তায় নেমেছে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কনভয়ের পাইলট কারের সামনে শুয়ে পড়়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কংগ্রেস কর্মীরা। দুই পূজারিনির প্রবেশের বিরুদ্ধে কেরলে হরতালের দিন যে হিংসা ছড়িয়েছে, তার জন্য বাম সরকারকেই দায়ী করে শুক্রবার লোকসভায় হাতে কালো ব্যান্ড বেঁধে সরব হয়েছেন কেরলের কংগ্রেস সাংসদ কে কে বেণুগোপাল। তারই পাশাপাশি দলের সাংসদদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ চাইছে। ওই পদক্ষেপকে প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন ইউডিএফের শরিক মুসলিম লিগের সাংসদ।
আরও পড়ুন: ঋতুমতী নারীর প্রতি ধর্মের এই রক্তচক্ষু হাস্যকর
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর বলছেন, ‘‘বিজেপি চাইছে কেরল বিধানসভায় অর্ডিন্যান্স পাশ হোক। এটা যে মিথ্যাচার, সেটাই আমরা ধরিয়ে দিতে চাইছি।’’ কী ভাবে? তারুরের ব্যাখ্যা, ‘‘সংবিধানের সূত্র ধরে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সংবিধানের ২৫ ও ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রয়োগ কী ভাবে হবে, তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। যেটা একমাত্র সংসদ করতে পারে।’’ সংসদের অধিবেশন ফুরিয়ে আসছে বলেই কেরলের কংগ্রেস অর্ডিন্যান্সের দাবি তুলছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলছেন না। কেন্দ্র ও রাজ্যে কংগ্রেসের দুই অবস্থানকে রাজনৈতিক শিবির ‘ভারসাম্যের খেলা’ বললেও তারুরদের তুলোধোনা করতে ছাড়ছে না সিপিএম!
আরও পড়ুন: পিঠে কিল-চড়, চোখে জল নিয়েও ক্যামেরা থেকে দৃষ্টি সরাননি
কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ও লোকসভার সাংসদ মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রনের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের বাম সরকার পরিকল্পনামাফিক দুই মহিলাকে মন্দিরে প্রবেশ করিয়ে বিজেপি-সঙ্ঘকে হাতিয়ার তুলে দিয়েছে। বিজেপি দেখাতে পারছে, হিন্দু ভাবাবেগ তারা রক্ষা করছে!’’ প্রদেশ সভাপতির কথায় ইঙ্গিত মিলছে, রাজ্যে বাম-বিরোধী এবং হিন্দু ভোট পুরোপুরি বিজেপি টেনে নেবে— লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সম্ভাবনা তাঁরা ঠেকাতে চান। যদিও কেরলের অর্থমন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টমাস আইজ্যাকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কংগ্রেস এবং বিজেপি মিলে শবরীমালাকে আর এক অযোধ্যা-কাণ্ড বানাতে চাইছে! কংগ্রেসকেই বলতে হবে, তাদের সভাপতির নাম রাহুল গাঁধী না রাহুল ঈশ্বর (শবরীমালায় মহিলা প্রবেশ বিরোধী প্রতিবাদের মুখ)?’’
সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল। দলের সাংসদদের আলোচনায় সনিয়া গাঁধীও বলেছেন, তাঁরা লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং নারীর সমানাধিকারের পক্ষে। সেই প্রসঙ্গ টেনে সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘কেরলের কংগ্রেস ভাবছে, সিপিএমকে তো প্যাঁচে ফেলা যাচ্ছে! তাতে যে বিজেপির উদ্দেশ্যপূরণ হচ্ছে, সেটা তাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে ভাবতে হবে!’’