প্রতীকী চিত্র।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। তার বিরোধিতা করে মঙ্গলবার ব্যাঙ্কের অফিসারদের সংগঠনের দাবি, তার আগে ব্যাঙ্কের হিসাবের খাতা পরীক্ষা করুক সিএজি। দেখা হোক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির খাতা থেকে অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) মুছে দিতে ঠিক কত টাকা লোকসান হয়েছে সরকারের।
আজ দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন অভিযোগ তুলেছে, গত সাত বছরে, অর্থাৎ মোদী জমানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের খাতা থেকে প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদ ঋণ মুছে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র বলে আসছে, ব্যাঙ্কের খাতা থেকে এনপিএ মুছে দেওয়ার মানে ঋণ মকুব করা নয়। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৪.৪৮ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ পরে উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু তেমনই আবার ১৯ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি নতুন এনপিএ যোগ হয়েছে। অনাদায়ি ঋণের ধাক্কা সামলাতে কেন্দ্রকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ৩.২৬ লক্ষ কোটি টাকার বেশি পুঁজি ঢালতে হয়েছে। এর সিংহভাগ গিয়েছে করদাতাদের অর্থ থেকে। ফলে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে এনপিএ মুছে দেওয়ার দরুন রাজকোষের কত টাকা ক্ষতি হয়েছে, তার সিএজি-পরীক্ষা হওয়া দরকার।
কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌম্য দত্ত বলেন, ‘‘যে সব বেসরকারি সংস্থা ঋণ শোধ না করার ফলে রাজকোষের ক্ষতি হচ্ছে, কেন্দ্র এখন সেই সব সংস্থাকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেচতে চাইছে! বেসরকারিকরণ তাই কোনও সমাধান নয়, সমস্যা।’’
ব্যাঙ্ক বিক্রি: পরীক্ষা চান
ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ কেন জনস্বার্থ বিরোধী, তা নিয়ে আজ কনফেডারেশন প্রসেনজিৎ বসু, ইন্দ্রনীল চৌধুরী, রোহিত আজাদের মতো অর্থনীতিবিদদের তৈরি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘দেউলিয়া বিধি কাজে লাগিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। অনাদায়ি ঋণ বাবদ বকেয়া ৬.৮৫ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২.৪৬ লক্ষ কোটি উদ্ধার হয়েছে। এটা মাত্র ৩০ শতাংশ।’’
ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করে কনফেডারেশনের অনুষ্ঠানে আজ একই মঞ্চে তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে হাজির ছিলেন সিপিএমের পলিটবুরো নেতা নীলোৎপল বসুও।
এ বিষয়ে আজ সংসদেও সরব হয়েছে তৃণমূল। লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অভিযোগ তোলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন চলতি অর্থবর্ষে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেচার পরিকল্পনা করেছেন। উনি হলেন দেশের ‘বিগেস্ট সেলসউওম্যান’। এই সরকারটাই ‘বেচুবাবুর সরকার’।’’
রাজ্যসভায় সুখেন্দুশেখর রায়ের অভিযোগ, ১৩টি বেসরকারি সংস্থা ঋণ শোধ না করায় ব্যাঙ্কের প্রায় ২.৮৫ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই ১৩টি সংস্থা প্রায় ৪.৮৬ লক্ষ কোটি টাকা ধার শোধ করেনি। তাদের থেকে মাত্র ১.৬২ লক্ষ কোটি টাকার মতো উদ্ধার করা গিয়েছে। তাই ওই বিপুল ক্ষতি। সুখেন্দু বলেন, ‘‘ভিডিয়োকন ৪৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। উদ্ধার হয়েছে ২,৯০০ কোটি টাকারও কম। ব্যাঙ্ককে ৯৫ শতাংশ লোকসান মেনে নিতে হয়েছে।’’
অর্থমন্ত্রী বাজেটেই ঘোষণা করেছিলেন, চলতি আর্থিক বছরে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ করা হবে। তার বিরুদ্ধে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর ‘ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়নস’ ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সোমবারই অর্থ মন্ত্রক সংসদে প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে, কোন দু’টি ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে সংসদের চলতি অধিবেশনে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিল পাশ করানোর পরিকল্পনার কথা আগেই সরকার জানিয়েছে।
ধর্মঘট থেকে ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলিকে নিরস্ত করতে আজ অর্থ মন্ত্রক, শ্রম মন্ত্রক, ব্যাঙ্কের কর্তারা ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কনফেডারেশনের তরফে সৌম্য দত্ত বলেন, ‘‘আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, সরকারকে বলতে হবে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিল আসবে না এবং তা সরকারের কর্মসূচিতেই নেই। না হলে লড়াই চলবে।’’