বাবরি মসজিদ। —ফাইল চিত্র।
১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর। উন্মত্ত করসেবকদের নীচে চাপা পড়ে গেল মসজিদ। সশস্ত্র হামলায় একে একে উপড়ে ফেলা হল মসজিদের তিন-তিনটি গম্বুজ। আগে থেকে জ্বলতে থাকা হিংসার আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নিল। সাম্প্রদায়িক আগুনে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল সারা দেশ। সাম্প্রদায়িক হিংসার বলি হলেন কয়েক হাজার মানুষ।
আজ আরও এক ৬ ডিসেম্বর। ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭। কিন্তু ২৫ বছর আগের সেই দিন এখনও যেন টাটকা। রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ? এই নিয়ে বিতর্ক এখনও পিছু ছাড়েনি। বাবরি মসজিদ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। কেন এই বিতর্ক? ইতিহাসের সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত ঠিক কী কী ঘটেছে? দেখে নিন টাইমলাইনে
আরও পড়ুন :
ফের মন্দির জিগির, ঘরপোড়া আমরা, ভোট এলেই তাই ডরাই
১৫২৮: লোকশ্রুতি, মুঘল সম্র্রাট বাবরের নির্দেশে তাঁর সেনাপতি মীর বাঁকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেছিলেন।
অন্য একটি মতে, অযোধ্যার ওই জমিতেই রামমন্দির ছিল।
১৮৫৩: নির্মোহী আখড়া অনুগামীরা সশস্ত্র হামলা চালায় বাবরি মসজিদে।
১৮৫৫: বিতর্কে লাগাম দিতে দু’ভাগে ভাগ করা হয় বাবরি মসজিদ। একটি অংশ হিন্দুদের পূজার্চনার জন্য চিহ্নিত করে ব্রিটিশ প্রশাসন।
১৮৮৩: হিন্দুদের জন্য চিহ্নিত অংশে ফের মন্দির গড়ার চেষ্টা। আপত্তি জানায় মুসলিমরা।
১৮৮৩-১৯৩৪: বাবরি মসজিদ ঘিরে বিতর্ক আর হিংসা বাড়তে শুরু করে।
১৯৩৪: হিংসা ভয়াবহ আকার নেয়। সংঘর্ষ শুরু হয় অযোধ্যা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে।
১৯৪৯:
•২২ ডিসেম্বর: স্বাধীনতার দু’বছর পর। রাতের অন্ধকারে একদল কট্টরপন্থী মসজিদে ঢোকেন। মসজিদের ভিতরে রামের বিগ্রহ রেখে দেন।
• ২৩ ডিসেম্বর: দেশ জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ শুরু হয়। হিন্দু-মুসলিম দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।
• ২৪ ডিসেম্বর: ওই জমিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
১৯৮৬:
• ১ ফেব্রুয়ারি: হিন্দুদের পুজোর জন্য মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ ফৈজাবাদ জেলা আদালতের। আধ ঘণ্টার মধ্যেই সেই তালা ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে হিন্দুদের বিরুদ্ধে।
• ১৪ ফেব্রুয়ারি: ‘কালো দিবস’ পালন করেন মুসলিমরা। হিংসার আগুনে জ্বলে ওঠে দিল্লি, মেরঠ-সহ উত্তরপ্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশ।
৯ নভেম্বর, ১৯৮৯: তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর অনুমতি নিয়ে বাবরি মসজিদের কাছেই রাম মন্দিরের শিলান্যাস করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০: রামমন্দিরের সমর্থনে গুজরাতের সোমনাথ থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী রথযাত্রা শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে গন্তব্য ছিল অযোধ্যা। কিন্তু, বিহারের সমস্তিপুরে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
১৯৯২:
• ৫ ডিসেম্বর: মহন্ত রামচন্দ্র পরমহংস এবং নিত্যগোপাল দাসের নেতৃত্বে অযোধ্যায় জড়ো হন প্রায় ২ লক্ষ করসেবক। পর দিনই তাঁদের অভিযান করার কথা ছিল। মজুত ছিল প্রচুর পুলিশ, ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছিল জায়গাটা।
• ৬ ডিসেম্বর: সকাল সাড়ে ১০টা। কর্ডন ভেঙে, বেড়া ডিঙিয়ে মসজিদে ঢুকতে শুরু করেন করসেবকরা। হাজার হাজার করসেবকে ঢেকে যায় বাবরি মসজিদ— স্থাপত্য ও চত্বর। মসজিদের তিনটি গম্বুজই ভেঙে ফেলা হয়। অস্থায়ী ভাবে গড়ে উঠল রামলালার মন্দির। দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।
• এই মাসেই দু’টি এফআইআর দায়ের করা হয়। প্রথমটি, অজ্ঞাতপরিচয় করসেবকদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়টি, লালকৃষ্ণ আডবাণী, এম এম জোশী-সহ কিছু বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। গঠিত হয় লিবারহান কমিশন।
১৯৯৩: আডবাণীদের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট।
৪ মে, ২০০১: সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আডবাণীদের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৩:
• ৫ মার্চ: মসজিদ না মন্দির কী ছিল? জানতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে (এএসআই) বিতর্কিত জমিতে খনন করতে নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।
• ২২ অগস্ট: গড়ে তোলা বাবরি মসজিদের নীচে মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ রয়েছে, রিপোর্ট জমা দেয় এএসআই।
২ নভেম্বর, ২০০৪: আডবাণীদের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ সিবিআইয়ের। সিবিআইয়ের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই।
২০০৯: লিবারহান কমিশন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে দোষী সাব্যস্ত হন আডবাণী, এম এম জোশী, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং কল্যাণ সিংহ।
১ অক্টোবর, ২০১০: নির্মোহী আখড়া, রামলালা এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড— তিন পক্ষের মধ্যে জমি সমান ভাগে ভাগ করে দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায় তিন পক্ষই।
মে, ২০১১: বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি-সহ মোট ৬৭ একর জমির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি সুপ্রিম কোর্টের।
৩১ মার্চ, ২০১৫: আডবাণীদের সুপ্রিম কোর্টের নোটিস।
২০১৭:
• ২১ মার্চ: অযোধ্যার বিতর্ক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ সুপ্রিম কোর্টের।
• ১৯ এপ্রিল: আডবাণী, জোশী, উমা ভারতীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা ফের শুরু করা যায়, জানাল সুপ্রিম কোর্ট।
• ৩০ মে: আডবাণীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চার্জ গঠন হয়।
• ১১ অগস্ট: অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে চূড়ান্ত শুনানির দিন স্থির হয় ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭।
• পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয় ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮।