National news

বাবরি-রাম মন্দির বিতর্কের ইতিবৃত্ত, দেখুন টাইমলাইন

আজ আরও এক ৬ ডিসেম্বর। ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭। কিন্তু ২৫ বছর আগের সেই দিন এখনও যেন টাটকা। রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০১
Share:

বাবরি মসজিদ। —ফাইল চিত্র।

১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর। উন্মত্ত করসেবকদের নীচে চাপা পড়ে গেল মসজিদ। সশস্ত্র হামলায় একে একে উপড়ে ফেলা হল মসজিদের তিন-তিনটি গম্বুজ। আগে থেকে জ্বলতে থাকা হিংসার আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নিল। সাম্প্রদায়িক আগুনে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল সারা দেশ। সাম্প্রদায়িক হিংসার বলি হলেন কয়েক হাজার মানুষ।

Advertisement

আজ আরও এক ৬ ডিসেম্বর। ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭। কিন্তু ২৫ বছর আগের সেই দিন এখনও যেন টাটকা। রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ? এই নিয়ে বিতর্ক এখনও পিছু ছাড়েনি। বাবরি মসজিদ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। কেন এই বিতর্ক? ইতিহাসের সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত ঠিক কী কী ঘটেছে? দেখে নিন টাইমলাইনে

Advertisement

আরও পড়ুন :

ফের মন্দির জিগির, ঘরপোড়া আমরা, ভোট এলেই তাই ডরাই

পঁচিশ বছর আগের এক দিন

১৫২৮: লোকশ্রুতি, মুঘল সম্র্রাট বাবরের নির্দেশে তাঁর সেনাপতি মীর বাঁকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেছিলেন।

অন্য একটি মতে, অযোধ্যার ওই জমিতেই রামমন্দির ছিল।

১৮৫৩: নির্মোহী আখড়া অনুগামীরা সশস্ত্র হামলা চালায় বাবরি মসজিদে।

১৮৫৫: বিতর্কে লাগাম দিতে দুভাগে ভাগ করা হয় বাবরি মসজিদ। একটি অংশ হিন্দুদের পূজার্চনার জন্য চিহ্নিত করে ব্রিটিশ প্রশাসন।

১৮৮৩: হিন্দুদের জন্য চিহ্নিত অংশে ফের মন্দির গড়ার চেষ্টা। আপত্তি জানায় মুসলিমরা।

১৮৮৩-১৯৩৪: বাবরি মসজিদ ঘিরে বিতর্ক আর হিংসা বাড়তে শুরু করে।

১৯৩৪: হিংসা ভয়াবহ আকার নেয়। সংঘর্ষ শুরু হয় অযোধ্যা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে।

১৯৪৯:

২২ ডিসেম্বর: স্বাধীনতার দুবছর পর। রাতের অন্ধকারে একদল কট্টরপন্থী মসজিদে ঢোকেন। মসজিদের ভিতরে রামের বিগ্রহ রেখে দেন।

২৩ ডিসেম্বর: দেশ জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ শুরু হয়। হিন্দু-মুসলিম দুপক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।

২৪ ডিসেম্বর: ওই জমিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।

১৯৮৬:

• ১ ফেব্রুয়ারি: হিন্দুদের পুজোর জন্য মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ ফৈজাবাদ জেলা আদালতের। আধ ঘণ্টার মধ্যেই সেই তালা ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে হিন্দুদের বিরুদ্ধে।

• ১৪ ফেব্রুয়ারি: ‘কালো দিবস’ পালন করেন মুসলিমরা। হিংসার আগুনে জ্বলে ওঠে দিল্লি, মেরঠ-সহ উত্তরপ্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশ।

নভেম্বর, ১৯৮৯: ৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর অনুমতি নিয়ে বাবরি মসজিদের কাছেই রাম মন্দিরের শিলান্যাস করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০: রামমন্দিরের সমর্থনে গুজরাতের সোমনাথ থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী রথযাত্রা শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে গন্তব্য ছিল অযোধ্যা কিন্তু, বিহারের সমস্তিপুরে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

১৯৯২:

ডিসেম্বর: মহন্ত রামচন্দ্র পরমহংস এবং নিত্যগোপাল দাসের নেতৃত্বে অযোধ্যায় জড়ো হন প্রায় লক্ষ করসেবক। পর দিনই তাঁদের অভিযান করার কথা ছিল মজুত ছিল প্রচুর পুলিশ, ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছিল জায়গাটা।

ডিসেম্বর: সকাল সাড়ে ১০টা। কর্ডন ভেঙে, বেড়া ডিঙিয়ে মসজিদে ঢুকতে শুরু করেন করসেবকরা। হাজার হাজার করসেবকে ঢেকে যায় বাবরি মসজিদস্থাপত্য চত্বর সজিদের তিনটি গম্বুজই ভেঙে ফেলা হয় অস্থায়ী ভাবে গড়ে উঠল রামলালার মন্দির। দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।

এই মাসেই দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়। প্রথমটি, অজ্ঞাতপরিচয় করসেবকদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়টি, লালকৃষ্ণ আডবাণী, এম এম জোশী-সহ কিছু বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। গঠিত হয় লিবারহান কমিশন।

১৯৯৩: আডবাণীদের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট।

মে, ২০০১: সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আডবাণীদের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ হয়ে যায়।

২০০৩:

মার্চ: মসজিদ না মন্দির কী ছিল? জানতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে (এএসআই) বিতর্কিত জমিতে খনন করতে নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।

২২ অগস্ট: গড়ে তোলা বাবরি মসজিদের নীচে মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ রয়েছে, রিপোর্ট জমা দেয় এএসআই।

নভেম্বর, ২০০৪: আডবাণীদের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ সিবিআইয়ের। সিবিআইয়ের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই।

২০০৯: লিবারহান কমিশন ৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে দোষী সাব্যস্ত হন আডবাণী, এম এম জোশী, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং কল্যাণ সিংহ।

অক্টোবর, ২০১০: নির্মোহী আখড়া, রামলালা এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডতিন পক্ষের মধ্যে জমি সমান ভাগে ভাগ করে দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায় তিন পক্ষই।

মে, ২০১১: বিতর্কিত .৭৭ একর জমি-সহ মোট ৬৭ একর জমির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি সুপ্রিম কোর্টের।

৩১ মার্চ, ২০১৫: আডবাণীদের সুপ্রিম কোর্টের নোটিস।

২০১৭:

• ২১ মার্চ: অযোধ্যার বিতর্ক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ সুপ্রিম কোর্টের।

• ১৯ এপ্রিল: আডবাণী, জোশী, উমা ভারতীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা ফের শুরু করা যায়, জানাল সুপ্রিম কোর্ট।

• ৩০ মে: আডবাণীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চার্জ গঠন হয়।

• ১১ অগস্ট: অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে চূড়ান্ত শুনানির দিন স্থির হয় ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭।

• পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয় ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement