নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘মুখরক্ষা’ করছে পশ্চিমবঙ্গও। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামিকাল দেশে যে গুটিকয় রাজ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা, তাতে স্থান পেতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যও।
বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচনের আগে শেষ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে তাই ‘আয়ুষ্মান ভারত’ বা ‘সকলের জন্য চিকিৎসা’ প্রকল্পটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই, পরিকাঠামোরও অভাব। তাই আপাতত ছ’টি রাজ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু করে কোনও মতে মুখরক্ষা করতে চলেছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশ ছাড়া বাকি চারটি রাজ্যই (হরিয়ানা, ছত্তীসগঢ়, মণিপুর, গুজরাত) বিজেপি-শাসিত।
যদিও চলতি বাজেটে প্রকল্পটি ঘোষিত হওয়ার পরে ওই প্রকল্প ঘিরে সংঘাত বাধে কেন্দ্র-রাজ্যের। পশ্চিমবঙ্গে আগে থেকেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু ছিল। তাই একাধিক কারণ দেখিয়ে ওই প্রকল্পে যোগদানের প্রশ্নে বেঁকে বসে পশ্চিমবঙ্গ। শেষ পর্যন্ত উভয় শিবিরের একাধিক বৈঠকের পরে রফাসূত্র বেরোয়। প্রকল্পে অংশ নেয় রাজ্য। এর ফলে রাজ্যের প্রায় ৬ কোটি মানুষ ওই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পটি সফল ভাবে চলছে। তাই অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ভাল। ফলে ওই রাজ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারতে’র কাজ শুরু হওয়া সম্ভব।
ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ এখন স্বাস্থ্য বিমার আওতায় রয়েছে। সেই কারণে দেশের প্রায় ১০ কোটি গরিব পরিবারকে (৫০ কোটি নাগরিক) বছরে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য-সুবিধা দিতে ওই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। বিজেপি যেটিকে ‘মোদী কেয়ার’ বলেই প্রচার করেছে। ঠিক ছিল, গরিব মানুষের স্বার্থে মোদী সরকারের ওই উদ্যোগকে অন্যতম মূলধন করে লোকসভার প্রচারে ঝাঁপাবে দল। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও পরিকাঠামোর অভাবে গোটা দেশে একই সঙ্গে ওই প্রকল্প চালু করতে পারছে না মোদী সরকার। ঠিক হয়েছে, আপাতত ধাপে ধাপে চালু করা হবে ওই প্রকল্প। আগামী ২ অক্টোবর গোটা দেশে ওই প্রকল্প চালু করার দিন ধার্য করেছে সরকার।
একাধিক রাজ্যে প্রকল্প চালু করার জন্য যে ধাঁচের পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা এখনও গড়ে ওঠেনি। সেই সমস্যাও দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে চাইছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কর্তাদের মতে, জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের শুরুতেও এ ধাঁচের সমস্যা হয়েছিল। পরে তা ঠিক হয়ে যায়। সমস্যা রয়েছে প্রকল্প খাতে খরচের অংশীদারি নিয়েও। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে খরচের ৬০ শতাংশ দেবে কেন্দ্র। বাকিটা দেবে রাজ্য। কিন্তু যে ভাবে ফি বছর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অনুদান কমিয়ে আনা হচ্ছে, তাতে এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নিজেদের বেশি অর্থ দিতে হবে বলে আশঙ্কায় ভুগছে রাজ্য সরকারগুলিও। বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ (যাদের রাজ্যেও নিজস্ব প্রকল্প চলছে) ওই আশঙ্কায় ভুগছে বেশি করে। তবু ‘মোদী কেয়ার’-এ তাদের উপর ভরসা করছে কেন্দ্র।