‘মামা’র সেনার ভয়ে আদিবাসীরা

গ্রামবাসীরা খোলাখুলিই বলছেন, “চিনে ফেলেছি বিজেপিকে। ভোটে জিতলে ফের ভিটেছাড়া করবে। তাই এ বারে আমাদের ভোট ভাইয়া রাজাকে। আপদে বিপদে তিনিই এখন পাশে থাকেন।”

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

পান্না শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৭
Share:

এক দিকে মামা, অন্য দিকে বাঘমামা।

Advertisement

মাঝে বিশটি পরিবারের আতঙ্কের দিন-রাত।

সন্ধ্যে নামলে বাঘের ভয়, দিনের আলো ফুটলে ‘মামা’ শিবরাজ সিংহ চৌহানের সৈন্য-সামন্তের।

Advertisement

“তেরো বছর আগে কী ভয়ঙ্কর বন্যা এল! দু-কূল ভাসিয়ে দিল কর্নাবতী নদী। ঘর-ঘটিবাটি কিছুই রইল না”, মনে করলে এখনও শিউরে ওঠেন নির্ভয় আদিবাসী। নিজের নাম এটাই বলেন। ওই দুঃসময়ে যেন ‘ভগবান’ হয়ে এলেন বিজেপির কুসুম সিংহ। এখন যিনি শিবরাজের মন্ত্রী। নিজের হাতে নতুন গ্রাম সাজিয়ে দিলেন। পান্নায় বাঘের অভয়ারণ্যের পাশেই। নিজের নাম দিয়েও নতুন গ্রামের নাম করতে চেয়েছিলেন।

তার পর বাঘের হালুম-হুলুম শুনেই কেটে গিয়েছে তেরোটি বছর। বেড়া টপকে বাঘ কখনও-সখনও ঢুকেও পড়েছে গ্রামে। ঘাড়ে এসে থাবাও পড়েছে কয়েকজনের। সে আতঙ্ক নিয়েই সংসার গড়িয়েছে, পরিবার বেড়েছে কুড়িটি আদিবাসী পরিবারের। ভোটের পরে ভোট এসেছে। বিজেপিকেও ভোলেননি নির্ভয়, রাজাজি, মীনারা। নতুন ঠিকানাতেই জন্মে বড় হচ্ছে বর্ষা, ক্রান্তি, দীক্ষারা।

কিন্তু এ বিজেপির হল কী? গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎই হানা দিল বন দফতর। ঘরে-ঘরে নোটিস পাঠাল, গোটা গ্রাম বাঘের ঘর। তারই ‘বাফার-জোন’। অতএব ঘর ছাড়ো। মাথায় হাত রাজাজিদের: “পরিবার নিয়ে কোথায় যাব? শহরে গিয়ে কাজ করলে দু’শো টাকা পাই। তাই দিয়ে কোনওমতে সংসার চলে। সেপ্টেম্বর থেকে রোজই আসতে শুরু করল বন দফতরের লোকজন। বাড়ির বৌরা কাঠ কাটতে গেলেও কুঠারও রেখে দিচ্ছে। কাঠও আনতে দিচ্ছে না। পেট চলবে কী করে?”

মধ্যপ্রদেশে গত ভোটে, এমনকী লোকসভাতেও দু’হাত তুলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন আদিবাসীরা। কিন্তু হালের কিছু সমীক্ষাও বলছে, সে ভোটব্যাঙ্কও দ্রুত কমছে। ভোটের মরসুম, আদিবাসীদের ভোট হারানোর ঝুঁকি কী করে নেন শিবরাজ? বিশেষ করে তাঁর রাজ্যেই যখন ২১ শতাংশের বেশি আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক! ৪৭ টি আসনও সংরক্ষিত তাঁদের জন্য। পার ঘটনা কোনও ভাবে কানে গিয়েছে শিবরাজের। প্রচারের ফাঁকে নির্ভয়, রাজাজিদের পাড়ার মোড়ে থেমেছেন দশ মিনিট। শুনেছেন সব কথা। আশ্বাসও দিয়েছেন, “চিন্তা করো না, তোমাদের মামা আছে তো!”

কী আশ্চর্য! তার পর থেকে বন দফতরের হানাও বন্ধ। তাতে কী? গ্রামবাসীরা খোলাখুলিই বলছেন, “চিনে ফেলেছি বিজেপিকে। ভোটে জিতলে ফের ভিটেছাড়া করবে। তাই এ বারে আমাদের ভোট ভাইয়া রাজাকে। আপদে বিপদে তিনিই এখন পাশে থাকেন।” ভাইয়া রাজা? কংগ্রেসের প্রার্থী শিবজিৎ সিংহ। নিজেদের বাড়ির উপরে গ্রামবাসীরা সকলে কংগ্রেসেরই পতাকা লাগিয়েছেন।

পান্না থেকে ফেরার পথে হঠাৎই ভর করল একটি গান। অজান্তে বদলে গেল একটি শব্দও: ‘পায়ে পড়ি বাঘমামা/ করো নাকো রাগ ‘মামা’/ তুমি যে ‘ভোটে’ কে তা জানত?’

পান্না থেকে হীরা কে নেবেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement