ওয়াহিদা বেগম।
কাবুলিওয়ালার বউ হতে ছেড়েছিলেন অসমের ঘর। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির বদলে সপুত্র ঠাঁই হয়েছিল পাকিস্তানের হাজতে! বিস্তর আইনি লড়াই ও কূটনৈতিক যোগাযোগের পরে শেষ পর্যন্ত ওয়াগা সীমান্ত পার করে, ১১ বছরের ছেলে ফৈজ খানকে নিয়ে বুধবার দেশে ফিরলেন
ওয়াহিদা বেগম।
নগাঁওয়ের বড় বজারের বাসিন্দা ওয়াহিদা বেগমের স্বামী মহসিন খান বছর পাঁচেক আগে মারা যান। পরে সেলিম খান নামে এক কাবুলিওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় ওয়াহিদার। ২০২২ সালের নভেম্বরে স্বামীর সম্পত্তি ৬০ লক্ষ টাকায় বেচে দিয়ে নগাঁও সদর থেকে ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে ওঠেন তিনি। কিন্তু বাড়ি ফেরেননি। পরে তাঁদের গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পাওয়া যায়। ওয়াহিদার মা আরিফা বেগম মেয়ে ও নাতির উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে সম্পত্তি কেনাবেচায় যুক্ত তিন জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর সন্দেহ ছিল, সম্পত্তি সংক্রান্ত কারণে মেয়ে ও নাতিকে অপহরণ করা হয়েছে।
৩০ নভেম্বর অচেনা নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে। জানানো হয়, পাক-আফগান চমন সীমান্তে পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির হাতে ধরা পড়েছেন সপুত্র ওয়াহিদা। তাঁদের কাছে পাকিস্তানে আসার কোনও বৈধ নথিপত্র ছিল না। সন্তান-সহ কোয়েটা জেলে আছেন ওয়াহিদা। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী আইনি নোটিসও আরিফাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেন। ভারতীয় দূতাবাসেও এই সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল।
আরিফার বক্তব্য, মেয়েকে ফেরানোর ব্যাপারে পুলিশের কাছে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে ভারতের পাক হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনও সাহায্য পাননি। চিঠি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতিকেও। অবশেষে মামলা করেন দিল্লি হাই কোর্টে। সেখান থেকে গৌহাটি হাই কোর্টে মামলা পাঠানো হয়। আইনজীবী সন্তোষ কুমার সুমন ওয়াহিদার বিষয়টি নিয়ে মামলা চালান। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ইসলামাবাদের ভারতীয় হাই কমিশন ও ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে বিষয়টি দেখতে বলে।
সুমন আজ ওয়াহিদার হস্তান্তরের পরে বলেন, এই মুক্তি এক বড় কূটনৈতিক সাফল্য। পাকিস্তানের কারা কর্তৃপক্ষ প্রথমে অসহযোগিতা করছিল। ভারতের চাপে পরে ওয়াহিদাকে ছাড়তে সম্মত হয় তারা। ও পারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাঁদের। অবশ্য এখনই বাড়ি ফিরতে পারবেন না ওয়াহিদা। বিএসএফের কাউন্সেলিংয়ের পরে বিচারকের কাছে তাঁদের জবানবন্দি নথিবদ্ধ করা হবে। এর পর আরিফাকে ওয়াহিদা ও ফৈজের বৈধ অভিভাবকত্বের দাবি জানিয়ে আবেদন জানাতে হবে সুপ্রিম কোর্টে।
আজ ওয়াহিদার সঙ্গেই হস্তান্তরিত হন লাহোর জেলে বন্দি থাকা সূরজ পাল ও রমেশ এবং করাচির মালির জেলে বন্দি থাকা সাবির আহমেদ দারস।