ফাইল ছবি।
গত কাল ও আজ মিলিয়ে নাগরিক পঞ্জি নিয়ে সংসদে অমিত শাহকে কার্যত মুখ খুলতে দেয়নি তৃণমূল এবং কংগ্রেস। পাল্টা জবাবে অরুণ জেটলি, প্রকাশ জাভড়েকর, কিরেন রিজিজুর নেতৃত্বে আজ গেরুয়া শিবির রাহুল গাঁধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এনআরসি নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগে সরব হল।
রাজ্যসভায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের যৌথ বিরোধিতায় সে ভাবে কিছু বলতে পারেননি অমিত। একই কারণে এনআরসি নিয়ে জবাব দিতে পারেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও। সংসদে দলীয় দফতরে বসে এনআরসি-র কারণে দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে সরব হন মমতাও।
সম্মিলিত এই বিরোধী আক্রমণ প্রতিহত করতে এবং অমিতের মুখ খুলতে না পারার প্রতিবাদে বিকেলেই মাঠে নামেন জেটলি-জাভড়েকররা। জেটলি বলেন, ‘‘রাহুল এবং মমতার মতো নেতাদের বোঝা উচিত দেশের সার্বভৌমত্ব কোনও খেলনা নয়। সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকত্ব ভারতীয়ত্বের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সীমান্তের ও-পার থেকে আমদানি করা ভোটব্যাঙ্ক নয়।’’ পরে নিজস্ব ব্লগে জেটলি দাবি করেন, ‘‘ইন্দিরা এবং রাজীব গাঁধীর সরকার দেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে আসা অভিবাসীদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো হবে। কংগ্রেস এখন উল্টো সুরে গাইছে। ‘টুকড়ে-টুকড়ে’ গ্যাংয়ের সঙ্গে তারা হাত মিলিয়েছে।’’
অমিত যাতে বক্তব্য রাখতে পারেন, আজ সকালে রাজ্যসভায় অবশ্য তার জন্য সক্রিয় ছিলেন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। অধিবেশনের শুরুতেই তিনি বলে দেন, রাজনীতি হোক কক্ষের বাইরে। কিন্তু অমিত বলতে উঠতেই আপত্তি জানান কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা। বলেন, ‘‘রাজীব গাঁধীর পরে নরসিংহ রাও থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো প্রধানমন্ত্রীরা ভিতু— অবিলম্বে এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে অমিতকে।’’ হট্টগোলে অধিবেশন বাতিল করেন নায়ডু।
বেলা দু’টোর সময়ে অমিত ফের বলতে উঠলে ফের আপত্তি জানান তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়। ওয়েলে নেমে আসেন বিরোধী সাংসদেরা। বাধ্য হয়ে বসে পড়েন অমিত। বিজেপি সাংসদ রাকেশ সিংহ বলেন, ‘‘বিরোধীরা নিজেদের কথা বললেও শাসক শিবিরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিচ্ছেন না।’’ পরে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ও পীযূষ গয়াল বলেন, ‘‘বিজেপি সভাপতিকে পরিকল্পিত ভাবে বিরোধীরা বলতে দিচ্ছেন না।’’ লোকসভায় তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষ, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীও সরব হন।
সংসদে দলীয় দফতরে বসে সুর চড়ান মমতাও। তিনি বলেন, ‘‘খুব বেশি হলে ১ শতাংশ মানুষ অনুপ্রবেশ করেছে। অথচ বিজেপি সবাইকে অনুপ্রবেশকারীর তকমা দিচ্ছে। মানুষগুলোকে বেঁচে থাকতেই মেরে ফেলা হল। এঁরা কোনও সুবিধাই পাবেন না। দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করছে বিজেপি। মুর্শিদাবাদের ৮৩৩ জন অসমের জেলে রয়েছেন।’’ পরে সংসদের বাইরে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, ‘‘এক জন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যে ভাবে মমতা গৃহযুদ্ধের কথা বলছেন, তা খুবই দুঃখজনক।’’ পরে নিজের বক্তব্য ব্যাখ্যা করে মমতা বলেন, ‘‘দেশে যাতে রক্তস্নান না হয়, তার জন্যই আমি কেন্দ্রকে সতর্ক করে দিচ্ছি।’’