নেশার টান এতই ছিল যে রক্ত বিক্রি করে টাকা জোগাড় করতেন। নেশার চোটে পরিবার সঙ্গ ছাড়ে। হাত ছাড়ে প্রেমিকাও। যখন ঠিক করলেন আত্মহত্যা করবেন, তখনও ঘুমের ওষুধ জোগাড় করেতে ঘুষ দিতে হয়েছিল ৫০০ টাকা। অত গুলো ওষুধ খেয়েও মরেননি। জ্ঞান ফিরেছিল আইসিইউতে। ফিরেছিল হুঁশও। জীবনকে নতুন ভাবে বাঁচতে চাওয়া সানি বরুয়া এখন শুধু নিজেই সফল ব্যবসায়ী নন, ভাত জোগাচ্ছেন অনেকের।
গুয়াহাটির সানি সঙ্গদোষে সেই সপ্তম শ্রেণিতে মদ ধরেছিলেন। নবম শ্রেণিতে যখন পড়েন নিয়মিত মদ্যপান জীবনের অঙ্গ। লেখাপড়াও এগোয়নি দশম শ্রেণির বেশি। এ দিকে বাবা পুলিশকর্মী! লজ্জায় ছেলের সঙ্গে এক রকম সম্পর্কই চুকিয়ে দেন তিনি। বন্ধ করেন হাতখরচ দেওয়া। বলে দেন, নেশার খরচ নিজেকেই জোটাতে হবে। সেই কিশোর বয়স থেকে যুব বয়স পর্যন্ত মদ খাওয়ার তাড়নায় কী না করেছেন। টাকা না থাকলেই বেচে দিতেন রক্ত।
সানি বলেন, “বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল ব্যবসা করতে। খুললাম ভাতের হোটেল। চলল না। নেশার জন্য দীর্ঘদিনের প্রেমিকাও ২০১৪ সালে ছেড়ে চলে গেল। ভাবলাম বেঁচে থেকে লাভ নেই। একটা ছেলেকে দিয়ে অনেক ঘুমের ওষুধ জোগাড় করেছিলাম। সবকটা খেয়েও প্রাণ গেল না।” সানি বলে চলেন, “বেঁচে ফিরেও মদ ছাড়িনি। কিন্তু মাথায় একটা চিন্তা ঢুকল, জীবনে যখন কোনও লক্ষ্যই বাকি নেই, তখনও ভগবান বাঁচালেন কেন! সেই চিন্তা থেকেই মদকে পিছনে ফেলে আবার ব্যবসায় মন দিলাম। একই ঘরে, একই হাঁড়ি-কড়াই ভরসা করে একই ‘আখল ঘর’ নামে আবারও হোটেল শুরু হল।”
গত বারের ফেল করা হোটেল এ বার কিন্তু হিট! সামনেই গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও অনেক বাজার-দোকান-দফতর। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল আখল ঘরের সুস্বাদু খাবার আর কম দামের কথা। এখন যে কোনও দিন দুপুরে সেখানে খেতে গেলে ঝুপড়ি হোটেলটার বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হয় আধঘণ্টা। কিন্তু কেউ অধৈর্য্য হয়ে চলে যান না। বরং জমে ওঠে আড্ডা। অসমিয়া হোটেলের অভাবনীয় সাফল্যে এখন সানি বরুয়া রাজগড় রোডে ‘রোগান জোশ’ নামে আরও এক ‘গাড়ি-রেস্তোঁরা’ চালু করেছেন। সব মিলিয়ে মাসে অন্তত লাখ তিনেকের মুনাফা। নিজের রক্ত বেচে নেশা করা ছেলেটার হাত ধরেই আজ ৩২ চেয়ারের হোটেলের ১২ জন কর্মীর সংসার চলছে। সানির কথায়, “জীবন যখন আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়, তখন তার সদ্বব্যহার করা আপনার কর্তব্য।”