প্রতিষ্ঠাতা অখিল গগৈ এখন জেলে। ৭০টি সংগঠন একজোট করে পৃথক রাজনৈতিক দল তৈরি অসমে। ছবি:পিটিআই
আগামী বছরের নির্বাচনের আগে অসমে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যমঞ্চ গড়া ও সব আঞ্চলিক সংগঠনকে একত্রিত করে বিকল্প রাজনৈতিক দল গড়ার চেষ্টা সফল হয়নি। আগেভাগে রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলেছে আসু। এ বার তাই ৭০টি সংগঠনকে একজোট করে পৃথক রাজনৈতিক দল গড়ল কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। দলের নাম, ‘রাইজর দল’, অর্থাৎ আমজনতার দল।
কৃষক মুক্তির প্রতিষ্ঠাতা নেতা অখিল গগৈ এখনও কারাবন্দি। অধিকাংশ মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন তিনি। সংগঠনের আশা, অক্টোবরের মধ্যেই অখিল মুক্তি পাবেন। শুক্রবার নতুন দল গঠন করে দলের নেতারা বলেন, তাঁদের লড়াই এক দিকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বিজেপির বিরুদ্ধে অন্য দিকে ‘সাম্প্রদায়িক’ কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ জোটের বিরুদ্ধেও। দলের দরজা সকলের জন্য খোলা।
প্রদেশ কংগ্রেস নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, এনআরসি ও বিভিন্ন বিষয়ে বিজেপির বিরোধিতা করা বিরোধী রাজনৈতিক দল-সংগঠনগুলির মহাজোট গঠনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এআইইউডিএফ ছাড়া কেউ তাদের হাত ধরেনি এখনও পর্যন্ত। এতে হিন্দুত্ব তাস খেলে বিজেপি বলতে শুরু করেছে, কংগ্রেস ধুবড়ির এআইইউডিএফ সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইছে।
আরও পড়ুন: হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা
এ দিকে আসু, অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ ও তাদের সঙ্গে থাকা ৩০টি সংগঠন, বিশিষ্ট জন, শিক্ষাবিদ, শিল্পীরা মিলে তৈরি করেছে ‘অসম জাতীয় পরিষদ’ (এজেপি)। অসম সংগ্রামী মঞ্চও এজেপিতে মিলে যায়। এজেপি ১২৬টি আসনের মধ্যে ৮০-১০০ আসনে প্রার্থী দেবে ঘোষণা করে জানিয়েছে, সমঝোতার রাস্তা খোলা।
এই পরিস্থিতিতে আরও একটি রাজনৈতিক দল বিজেপির ভোট ভাঙিয়ে অন্যদের সুবিধে করে দেবে, নাকি এত ভোট ভাগাভাগিতে বিজেপিরই ফায়দা হবে— সেটাই প্রশ্ন। সদ্যগঠিত রাইজর দলের অন্যতম মুখ জহ্নু বরুয়া বলেন, “জনতার স্বতস্ফূর্ত দাবিতে তৈরি হল জনতার দল। রাজ্যকে বাঁচাতে সব দল-সম্প্রদায়-ধর্ম-জাতির মানুষকে একজোট হতে হবে।” নতুন দল গঠনকে স্বাগতই জানিয়েছেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রঞ্জিৎকুমার দাস। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে সকলেরই দল গঠনের অধিকার আছে। আমরা আরও দল গঠনকে স্বাগত জানাই। যত নতুন দল আসবে তত বিজেপিরই সুবিধা হবে।”
বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া আজ ‘রাইজর দল’ ও ‘অসম জাতীয় পরিষদ’— নবগঠিত এই দুই দলের উদ্দেশেই বলেছেন, “বিজেপিকে হারাতে হলে সকলে মিলে মহাজোট গড়ে ভোটে লড়া ছাড়া উপায় নেই। এতগুলি দল শাসক দলের বিপক্ষে লড়লে বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। তাতে বিজেপির জয়ের পথই সুগম হবে।” শইকিয়ার দাবি, কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে আদর্শগত লড়াইয়ে নেমেছে। কংগ্রেস ও বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেলা ভুল হবে। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল-সহ বিভিন্ন জটিল সময় কংগ্রেস সব সময়ে অসমবাসীর পক্ষে থেকেছে। অসমবাসী যখন বিজেপির ভুয়ো প্রতিশ্রুতিগুলো বুঝতে পারছেন, তখন তাঁদের সামনে অবেকগুলি বিকল্প রাখলে হবে না। বরং একজোট হয়ে শক্তিশালী বিকল্প মহাজোট গঠন করতে হবে।