নয়া চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি
গাফিলতির জেরে চার দিনে দু’টি রেল দুর্ঘটনা। জোড়া ধাক্কার চোটে আজ পদ খোয়ালেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান। গদি টলমল রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুরও। সব মিলিয়ে দু’টি রেল দুর্ঘটনায় কার্যত রেল মন্ত্রকের আমলাতান্ত্রিক খোলনলচে বদলে যেতে বসেছে।
খতৌলীতে উৎকল এক্সপ্রেসের পরে আজ ভোররাতে কানপুরের কাছে আরারিয়ায় বালি ভর্তি একটি ডাম্পার এসে ধাক্কা মারে কৈফিয়ত এক্সপ্রেসে। আহত হন শতাধিক যাত্রী। একটু বেলা গড়াতেই খবর আসে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী প্রভু। প্রধানমন্ত্রী আজই তা গ্রহণ না করলেও সরিয়ে দেওয়া হয় রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে মিত্তলকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অন্তত আধ ডজন সিনিয়র অফিসারকে টপকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় সঙ্ঘ তথা বিজেপির ঘনিষ্ঠ অশ্বিনী লোহানিকে। উত্তর রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার হতে না পারায় ১৯৮০ ব্যাচের এই অফিসার গত দেড় বছর ধরে এয়ার ইন্ডিয়ার সিএমডি হিসেবে কাজ করছিলেন। সেই পদে ৩ মাসের জন্য এসেছেন রাজীব বনশল।
গত কাল দুপুর থেকেই রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে মিত্তলের ইস্তফা নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল রেল ভবনে। সরকারি ভাবে মন্ত্রক এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে সূত্রের খবর, খতৌলীর দুর্ঘটনার পরে তড়িঘড়ি শীর্ষ আমলাদের ছুটিতে পাঠানোয় অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন মিত্তল। ক্ষোভ জানিয়ে গত কাল সন্ধেয় প্রভুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন তিনি। ইস্তফা খারিজ হবে, এমনটাই হয়তো আশা ছিল তাঁর।
আরও পড়ুন: তিন তালাক নিয়ে আইন আনার ভাবনা নেই কেন্দ্রের
কিন্তু আজকের দুর্ঘটনার পরে বদলে যায় গোটা ছবিটা। মোদীর সঙ্গে দেখা করে প্রভু জানান, রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ইস্তফা দিতে ইচ্ছুক। যা শুনে মোদী তা মঞ্জুর করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরে প্রভু নিজেও ইস্তফা দিতে চান বলে জানালে, মোদী তাঁকে মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য রদবদল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে আর রেলভবনে যাননি প্রভু। বাতিল করেন গোটা দিনের কর্মসূচি। আগামিকাল মন্ত্রকে আসবেন কি না তা-ও স্পষ্ট নয়। প্রভুর অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, তড়িঘড়ি আজ নতুন রেল বোর্ড চেয়ারম্যানের নিয়োগে মঞ্জুরি দিয়ে দেয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি। যদিও এটাকে আদৌ যথেষ্ট মনে করছেন না বিরোধীরা। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী টুইটারে জানতে চান, ‘‘কারও ধারণা আছে কি, ট্রেন দুর্ঘটনায় আর কত মৃত্যু হলে বিজেপি এ নিয়ে কিছু করবে?’’
উৎকল এক্সপ্রেসের মতো এ দিনের দুর্ঘটনাতেও উঠে এসেছে রেলের গাফিলতির প্রসঙ্গ। আরারিয়ায় এ দিন ভোররাতে বালি ভর্তি ডাম্পারের ধাক্কায় কৈফিয়ত এক্সপ্রেসের ১০টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। ৪৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ঘটনাস্থলে যান উত্তর-মধ্য রেলের কর্তারা। শুরু হয়েছে তদন্ত। পূর্ব-মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক এস বনশল বলেন, ‘‘ডাম্পারটি রেলের নয়। কোথা থেকে কেন সেটি লাইনের পাশে এল, তা দেখা হচ্ছে।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কাজ চলছিল ওখানে। তারই কাজে ডাম্পারটি বালি নিয়ে লাইনের কাছে গিয়েছিল। ট্রেন এলে কী হবে, তা কেউ খেয়ালই করেননি।
এই দুর্ঘটনার ফলে হাওড়া থেকে দিল্লিগামী অনেক ট্রেন ঘুরপথে চলছে।