এক মঞ্চে। অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নয়াদিল্লিতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।
শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ। মোদী সরকারকে চাপে ফেলতে ঘটা করে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। কিন্তু সাড়া পেলেন নামমাত্র। অরবিন্দ ছাড়া সশরীরে হাজির হলেন কেবল পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরাও আবার পরস্পরের মুখদর্শন করেননি।
অগস্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের সময়েই ঠিক হয়েছিল, চলতি মাসের শেষে কনক্লেভ হবে দিল্লিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আজ কনক্লেভের পরিবর্তে কেজরীবালের সঙ্গে দুই মুখ্যমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকে পরিণত হল গোটা বিষয়টি।
বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল এক মাস আগে। কিন্তু সাড়া দিয়েছিলেন মাত্র পাঁচ জন। তার মধ্যে বিহারের নীতীশ কুমার ভোটের ব্যস্ততায় আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। পুদুচেরি এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী, এন রঙ্গস্বামী এবং লাল থানহাওলা-ও একই ভাবে চিঠি লিখে জানান, ইচ্ছা থাকলেও অন্য কাজের জন্য আসতে পারছেন না তাঁরা। শেষ ভরসা ছিলেন মমতা ও মানিক। তাঁরাও এলেন বটে, কিন্তু পরস্পরের মুখোমুখি হলেন না। কেজরীবালের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হলেও, একে অন্যকে এড়িয়ে যান দু’জনে। আগেই বৈঠক সেরে ফিরে যান মানিক।
অভিষেককে আলিঙ্গন কেজরীবালের। —নিজস্ব চিত্র।
মমতার সঙ্গে এক মঞ্চে যাওয়া নিয়ে আলিমুদ্দিনের নেতাদের আপত্তি নতুন নয়। এর আগে শীতকালীন অধিবেশনের সময় সাধ্বী নিরঞ্জনের কুকথার বিরুদ্ধে সংসদে গাঁধীমূর্তির সামনে তৃণমূলের সঙ্গে বিক্ষোভ দেখাতে রাজি হয়েও পরে মূলত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আপত্তিতে সিপিএম ওই বিক্ষোভে সামিল হয়নি। তার উপরে চলতি সপ্তাহেই রাজ্যে একাধিক এলাকায় পুরভোট। পশ্চিমবঙ্গে যখন সূর্যকান্ত মিশ্ররা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন, তখন ভোটের ঠিক আগে মানিকবাবুর মতো বর্ষীয়ান নেতা মমতার সঙ্গে এক মঞ্চে থাকলে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে মনে করছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। তাই পলিটব্যুরো বৈঠকের পরে সোম ও মঙ্গলবার, এই দু’দিন দিল্লিতেই থেকে যাওয়া সত্ত্বেও আজ কেজরীবালের মঞ্চে যাওয়ার ব্যাপারে পিছিয়ে আসেন মানিকবাবু। প্রমাদ গোনেন কেজরীবাল। একে তিনি বাদে উপস্থিত হচ্ছেন দু’জন মাত্র মুখ্যমন্ত্রী। তাতেও যদি একজন অনুপস্থিত থাকেন, তা হলে নতুন করে মুখ পুড়বে দলের। তাই তড়িঘড়ি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলেন কেজরীবাল। ইয়েচুরির হস্তক্ষেপেই কেজরীবালের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন মানিক। তবে মমতা পৌঁছনোর ঠিক আগের মুহূর্তে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যগুলির স্বাধিকারে হাত দিচ্ছে বলে অভিযোগ কেজরীবালদের। সেই ‘স্বেচ্ছাচারিতা’র বিরুদ্ধে যৌথ ভাবে সরব হতেই আজকের এই কনক্লেভ ডাকা হয়েছিল। আপ শিবিরের পরিকল্পনা ছিল, কেজরীবালকে মধ্যমণি করে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি মঞ্চ গড়ে তোলা। যিনি দিল্লিতে বসে মঞ্চের মুখ হয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সংঘাত চালিয়ে যাবেন। এ দিন যা হল, তাতে কেজরীবাল মধ্যমণি না-হয়ে আর একটু হলেই সবেধন নীলমণিতে পরিণত হতে যাচ্ছিলেন। তাঁর
নিজের যদিও দাবি, ‘‘সবার সঙ্গে আলোচনা না-করে দিন ঠিক করে ফেলা হয়েছিল বলেই অনেকে আসতে পারেননি। ভবিষ্যতে সবার সম্মতি নিয়ে ফের এ ধাঁচের বৈঠক হবে।’’ কেজরীবালের সুরে সুর মিলিয়ে মমতাও দাবি করেন, দরকারে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানানো হবে সব মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু মানিকবাবু স্বীকার করে নেন, এই সম্মেলনের পিছনে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, তা সম্পূর্ণ সফল হয়নি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আশা অনুযায়ী সাড়া না মিললেও হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এটা ওঁর (কেজরী) প্রথম চেষ্টা ছিল।’’