গোল্লো ট্যাঙ্গোর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
জনতার দরবারে মানুষের মন জিতলেন কালিখো পুল।
আম আদমির কথা মুখোমুখি শুনলেন অরুণাচলের নবনিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী। খুঁজে দিলেন সমাধান-সূত্রও। নাবাম টুকির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পরই পুল ঘোষণা করেছিলেন— নতুন সরকার জন-বিচ্ছিন্ন হবে না। থাকবে না দুর্নীতি। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা নিজে শুনে ব্যবস্থা নেবেন। চালু করা হবে 'জনতার দরবার'।
জনতার কথা শুনতে শনিবার সকাল ১০টায় দরবার শুরু করেছিলেন নবনিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী। তা চলল গত কাল ভোর ৫টা পর্যন্ত! প্রথম দরবারেই সকলের নজর কাড়লেন পুল। তিন বছর ধরে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে বিভিন্ন দফতরের দরজায় দরজায় ঘুরে বেরিয়েছেন গোল্লো ট্যাঙ্গো। কালিখোর দরবারে এসে সমাধান মিলল।
পাপুমপারে জেলার পারাং গ্রামের বাসিন্দা গোল্লোর এক বছর বয়সী মেয়ের গায়ে গরম জল পড়ে গিয়েছিল। তা ৬ বছর আগের কথা। হাসপাতালে গিয়ে পোড়া ঘা সেরেছিল বটে। কিন্তু মেয়ে যত বড় হতে থাকে, তার বুকের ঘায়ের দাগও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে শুরু হয় চামড়ায় টান ধরা। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তাঁর মেয়ে গোল্লো নামপেরের ‘ব্রেস্ট ট্রান্সপ্লান্টেশন’ ও ‘স্কিন গ্রাফ্ট ট্রিটমেন্ট’ করাতে হবে। গোল্লো খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, গোটা দেশে তেমন চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে ওই চিকিৎসা করাতে খরচ পড়বে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। তিন বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতরের কাছে সাহায্যের আশায় ঘোরেন গোল্লো। কিন্তু লাভ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী জনতার দরবার বসিয়েছেন শুনে তিনি মেয়ে নামপেরের হাত ধরে ইটানগর পাড়ি দেন।
শনিবার সকাল ৮টায় তিনি লাইনে পৌঁছন। তারপর থেকে দিনভর অপেক্ষা। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে পৌঁছনোর সুযোগ আসে রাত ১১টায়। দুঃখের কথা বলেন গোল্লো। কাঁদতে কাঁদতে জানান, সকলে বলে দিয়েছে, গরিব ঘরের মেয়ের পক্ষে ভাল হওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু হাল ছাড়েননি গোল্লো। শুনে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসেন পুল। ছোট্ট নামপেরকে আদর করে তিনি জরুরি ভিত্তিতে নিজের কাছে থেকে কিছু টাকা গোল্লোর হাতে তুলে দেন। তারপর পাশে দাঁড়ানো সচিবদের নির্দেশ দেন— প্রয়োজনমতো বিদেশে নামপেরের চিকিৎসা হবে। চিকিৎসা বাবদ যা টাকা প্রয়োজন, রাজ্যই তার ব্যবস্থা করবে।
শুধু গোল্লোই নন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিচারের আশায় মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে আসা মানুষরা পুলের ব্যবহার, ধৈর্য্য আর ন্যায়বিচারে খুশি। মুখ্যমন্ত্রীর আবাসে প্রায় ১৯ ঘণ্টার দরবারে খাওয়া ও অন্যান্য দরকারি কাজের জন্য মাঝেমধ্যে বিরতি নিয়েছেন পুল। প্রতিবন্ধী, ছাত্র, শিল্পী, স্বাস্থ্যকর্মী, সন্ন্যাসী, পঞ্চায়েত সদস্য-সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি পুলের দরবারে লাইন দিয়েছিলেন। এমনকী সড়ক যোগাযোগ না থাকা প্রত্যন্ত লংডিং, সিঙ্গা থেকেও মানুষ দরবারে আসেন। পুল সকলের সঙ্গে দেখা করেন।