জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়া
রাষ্ট্রপতির দফতর বা কোনও সরকারি সূত্রে নয়, সংবাদমাধ্যমে নিজের কার্যকাল মেয়াদের আগেই শেষ হওয়ার খবর পেয়েছিলেন অরুণাচলের ‘বিতর্কিত’ রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়া। আজ রাজভবন ছাড়ার আগে চার পাতার চিঠিতে তিনি কেন্দ্রের অপমানের জবাব পরোক্ষে দিয়ে গেলেন।
অপসারণ যে আসন্ন—তা জানতেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যসচিব তথা রাজ্যপাল রাজখোয়া। স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে তাঁকে পদত্যাগের ‘সম্মানজনক সূত্র’ কেন্দ্রের তরফে বার বার দেওয়া হলেও তা মানতে চাননি দুঁদে এই আমলা। বরং সেই প্রস্তাব প্রকাশ্যে জানিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, কেন্দ্র ও রাষ্ট্রপতি চাইলে তাঁকে সরিয়ে দিন। কিন্তু মিথ্যে অজুহাতে তিনি নিজে থেকে সরবেন না।
গত বছর রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী বা স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা না করে রাজখোয়ার নির্দেশে বিধানসভা অধিবেশন এগিয়ে আনা, স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির অপসারণ, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরে কংগ্রেস তাঁকে বিজেপির এজেন্ট ও গণতন্ত্র হত্যাকারীর তকমা দেয়। তদনীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাজভবনে ঢুকে তাঁকে হুমকি পর্যন্ত দেন। রাজভবন অবরোধ করে রাজখোয়াকে কার্যত গৃহবন্দি করে ফেলে কংগ্রেস সরকার। বিধানসভায় তালা ঝোলানো হয়। গোটা দেশেই রাজখোয়ার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল।
সেই প্রসঙ্গ টেনে রাজখোয়া বিদায়ী চিঠিতে লেখেন: ‘‘ওই ঘটনাপ্রবাহ এখনও সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। তবে একটি কথা স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল, শুধুমাত্র আমার পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে, সব দিক বিবেচনা করেই রাষ্ট্রপতি ৩৫৬ ধারা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমার বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক হওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। আমি আমার রাজ্যে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার মতো নেতিবাচক সুপারিশ কখনওই করতাম না।’’
তাঁর বিধানসভা এগিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে বাতিল করে আগের স্থিতাবস্থা ফেরত আনতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। তার ভিত্তিতেই ফের ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস সরকার। রাজখোয়া লিখেছেন, ‘‘আগেও সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার, এমনকী রাষ্ট্রপতির নির্দেশও বাতিল করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার বা বেআইনি ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে ভর্ৎসনাও করেছে। এ ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা ফেরানো হলেও তাঁর বিরুদ্ধে আদালত বা সাংবিধানিক বেঞ্চ সরাসরি কোনও অভিযোগ আনেনি বা সরাসরি তাঁর সমালোচনা করা হয়নি। গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি তাঁর বিরুদ্ধে যে অপমানকর মন্তব্য করেছিলেন তাও পরে সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে বাদ দেওয়া হয়।’’
এ দিন রাজভবনে সস্ত্রীক রাজ্যপালকে বিদায় জানাতে মন্ত্রিসভার তরফে শুধুমাত্র শিক্ষামন্ত্রী হোংচুম গাদাম হাজির ছিলেন। ছিলেন প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী কামেং দোলো। বিদায়ী রাজ্যপাল বলেন, ‘‘দুর্নীতিমুক্ত ও বিকশিত অরুণাচল গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়েছিলাম। নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠা সহকারে অরুণাচলের সেবা করেছি। তাই মানুষের অকুন্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন পেয়েছি।’’
এ দিকে রাজখোয়ার ডাকা বিধানসভা অধিবেশনের জেরে ক্ষমতা হারানো ও রাজখোয়াকে রাজভবনে ঢুকে হুমকি দিয়ে আসা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি আজ উল্টো সুরে গেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির দাবি মতো রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজখোয়ার মতো ভাল মানুষকে বলির পাঁঠা করা হল। ওই রাজনৈতিক নাটকের জেরে প্রাণও গেল কালিখো পুলের।’’ এক সময়ের শত্রু রাজখোয়া সম্পর্কে অকুন্ঠ প্রশংসা করে টুকি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে পছন্দ করতাম। কিন্তু বিজেপির ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ নীতির বলি হলেন তিনি। কেন্দ্র এখন প্রমাণ করতে চাইছে, বিজেপি নয় রাজখোয়ার জন্যই রাজ্যে এত অশান্তি হয়েছিল।’’