প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি।
সাতসকালে সীমান্তে ফের পাক হামলা। ফের দুই ভারতীয় সেনা জওয়ানকে মেরে তাঁদের দেহ ছিন্নভিন্ন করার অভিযোগ উঠল পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, ব্যাটের বিরুদ্ধে। এ দিনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় সেনা।
পাক সেনা আদালতে কুলভূষণ যাদবের ফাঁসির আদেশের পর থেকে এমনিতেই দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। আজকের ঘটনার পরে বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেছেন, ‘‘দেহগুলি ছিন্নিভিন্ন করেছে আমাদের পড়শিরা। এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়, বর্বরোচিত। এই ধরনের অমানবিক ঘটনা তো যুদ্ধের সময়ও ঘটে না।’’ পাকিস্তানকে এর মূল্য চোকাতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায় ‘‘ওই দুই শহিদের আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না।’’ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ।
সকাল সাড়ে আটটা। জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণ গতি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এলাকায় ভারতীয় চেকপোস্ট লক্ষ করে প্রথমে বোমা আর মর্টার হামলা চালায় পাক সেনা বাহিনী। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। এর পর পরই ওই এলাকায় একটি টহলদারি বাহিনীর উপর হামলা চালায় পাক বর্ডার অ্যাকশন টিমের (ব্যাট) সদস্যরা। সেনা বাহিনীর নর্দান কম্যান্ডের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, রীতিমতো ছক কষে ভারতীয় চৌহদ্দির প্রায় আড়াইশো মিটার ভিতরে ঢুকে ওই হামলা চালিয়েছে ব্যাট। আর সেই কাজে তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করেছে পাক সেনা বাহিনী। ওই সেনা কর্তার কথায়, ‘‘ওখানে যে ভারতীয় বাহিনী টহল দিতে যাবে, তা আগে থেকেই জানত ব্যাট। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করে তারা। ভারতীয় বাহিনী ওই এলাকায় পৌঁছলে হামলা চালায় ৭-৮ জনের দলটার উপরে। বাকিরা নিজেদের বাঁচিয়ে পালাতে পারলেও দু’জনকে ধরে ফেলে ওরা। তাঁদের ওখানেই মেরে ওঁদের দেহ ছিন্নভিন্ন করে পালায় ব্যাটের সদস্যরা।’’
নিহত দু’জনের নাম প্রেম সাগর এবং নাইব সুবেদার পরমজিৎ সিংহ। হেড কনস্টেবল প্রেম সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ২০০তম ব্যাটিলিয়নের সদস্য ছিলেন। পরমজিৎ ২২ শিখ রেজিমেন্টের। গত এক মাসে বেশ কয়েক বার পাক বাহিনী সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ ভারতীয় সেনার। এই পরিস্থিতিতে আজই দু’দিনের সফরে কাশ্মীর উপত্যকায় পৌঁছেছেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত।
আরও খবর: কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতা করতে চান এরদোগান, প্রস্তাবে না দিল্লির
ব্যাটের বিরুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের দেহ ছিন্নভিন্ন করার অভিযোগও নতুন নয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মাচিল সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে এক জওয়ানকে মেরে তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল পাক বাহিনী। তারও আগে, ২০১৩ সালে লান্স নায়েক হেমরাজ, লান্স নায়েক সুধাকর সিংহ এবং কনস্টেবল রাজেন্দ্র সিংহকে মেরে তাঁদের দেহ ছিন্নভিন্ন করায় অভিযুক্ত ছিল ব্যাট। ২০০৮ সালে একই ভাবে গোর্খা রাইফেলসের এক সদস্যকে মেরে তাঁর মাথা কেটে ফেলে দিয়েছিল ব্যাট। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে আজকের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছে সেনা বাহিনীও।