একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার বিজেপিকে বাগে পেয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সংসদে প্যাঁচে ফেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কংগ্রেস। সেই চাপ কাটাতে এ বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনা’-কে হাতিয়ার করতে চাইছেন মোদী সরকার তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির যুক্তি, দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যেই আর্থিক সংস্কারের চেষ্টা করছে সরকার।
গ্রামের মানুষের মধ্যে এখনও কী ভয়ঙ্কর রকমের দারিদ্র, শুক্রবার ‘আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনা’-র রিপোর্টে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওই জনগণনা বলছে, এখনও গ্রামের ৭৫ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় ৫ হাজার টাকারও কম। প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবারে কোনও সদস্যেরই বাঁধা মাইনের কাজ নেই। ৩০ শতাংশ পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। ২০১১-র এই গণনা স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। কারণ ২০০৪ থেকে ২০১৪—এই দশ বছর কেন্দ্রে কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিল। এই পরিস্থিতিতে আজ আর্থিক সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করতে দারিদ্রের পরিসংখ্যানকেই সুকৌশলে ব্যবহার করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর যুক্তি, জমি বিল ও জিএসটি-র মতো আর্থিক সংস্কারের মধ্যে দিয়েই দারিদ্র দূরীকরণের চেষ্টা করছে মোদী সরকার।
জেটলির ব্যাখ্যা, ‘‘এই পরিস্থিতির উন্নতিই সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। কী ভাবে সেই লক্ষ্যপূরণ হবে? সংগঠিত ক্ষেত্রে স্থায়ী, ভাল বেতনের চাকরিই এর একমাত্র দাওয়াই।’’ দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর নিয়মিত ভাবে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে যুক্তি দিয়েছেন জেটলি। তাঁর মতে, কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ টানতেই মোদী সরকার আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি রূপায়ণ করতে চাইছে।
কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলতে ইউপিএ সরকারের খয়রাতি নীতিরও সমালোচনা করেছেন জেটলি। বোঝাতে চেয়েছেন, ইউপিএ সরকারের শুধু পাইয়ে দেওয়ার নীতিতে যে দারিদ্র দূর হয়নি, জনগণনার ফলাফলেই তা স্পষ্ট। জেটলির যুক্তি, ‘‘আর্থিক বৃদ্ধি না গরিবদের পাইয়ে দেওয়া? সংস্কারের নীতি না দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প? আমাদের বিশ্বাস, দু’টিই প্রয়োজন। দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে গরিবদের ততখানিই লাভ হয়, যতটা বৃদ্ধি ও আর্থিক সংস্কারে হয়। জনগণনা থেকে আমরা এই বার্তাই পেয়েছি।’’
মোদী সরকারের চিন্তার কারণ হল বিনিয়োগ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রিপোর্ট। যা বলছে, দশ বছরে ভারতে বিনিয়োগের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। জেটলির বক্তব্য, সরকার বেসরকারি লগ্নির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বানাতে চায়। জিএসটি-র মাধ্যমে ব্যবসায় বাধা দূর করে, জমি বিলের মাধ্যমে শিল্পের পথ প্রশস্ত করতে চায়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁস কাটানোরও চেষ্টা করছে সরকার।