গৃহবন্দি করা হল শাহ ফয়জলকে। —ফাইল চিত্র।
এ বার জম্মু-কাশ্মীরের তরুণ রাজনীতিক তথা প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়জলকে গৃহবন্দি করা হল। বুধবার দুপুরে ইস্তানবুল যাওয়ার পথে দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। তার পর ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীনগরে। সেখানে জন নিরাপত্তা আইনে গৃহবন্দি করা হয় তাঁকে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে ইস্তানবুলের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল শাহ ফয়জলের। কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাঁকে আটক করা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, এই মুহূর্তে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না তিনি। সেখান থেকে শ্রীনগরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়
দিন কয়েক আগে কাশ্মীরে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছিল বিবিসি। মঙ্গলবার ভিডিয়ো কনফারেন্সে তাদের সাক্ষাৎকার দেন শাহ ফয়জল। তাতে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। দিনের আলোয় সংবিধানকে খুন করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। তার পরেই এমন পদক্ষেপ করা হল তাঁর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: ‘ভারত যেন আমাদের সংযমকে দুর্বলতা না ভাবে’, নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি দিল পাকিস্তান
২০০৯ সালে আইএএস পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারী শাহ ফয়জল, নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে এ বছর জানুয়ারি মাসে সিভিল সার্ভিস থেকে ইস্তফা দেন। ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের রাজনৈতিক দল ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট’-এরও সূচনা করেন। সেই থেকে একাধিক বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তিনি। উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা বিলোপ এবং জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ, দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত এক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করেছেন।
দিন কয়েক আগে নিজের টুইটার হ্যান্ডলে শাহ ফয়জল লেখেন, ‘ইদের জৌলুস নেই। বেআইনি ভাবে মাতৃভূমি আত্মসাৎ করা হয়েছে। তাতে মর্মাহত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাশ্মীরিরা। ১৯৪৭ থেকে এখনও পর্যন্ত যা যা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত ইদ পালিত হবে না। উৎসব হবে না অপমানের বদলা না নেওয়া পর্যন্ত।’
আরও পড়ুন: ভারত-চিনকে আর উন্নয়নশীল দেশের সুবিধা পেতে দেব না, ডব্লিউটিও-কে তোপ ট্রাম্পের
ইদ মিটে যাওয়ার পর মঙ্গলবার তিনি লেখেন, ‘রাজনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কাশ্মীরে দীর্ঘমেয়াদি, অহিংস আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর মূলধারার রাজনীতি শেষ হয়ে গিয়েছে। সংবিধান মেনে রাজনীতিতে বিশ্বাসী মানুষরাও আর নেই। তাই এই মুহূর্তে সরকারের তাঁবেদার অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদী হওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই।’ দু’টির মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নেওয়ার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৫ অগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিক্ষোভ এড়াতে ওই দিন রাতেই জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাকে আটক করে সরকারি অতিথিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গৃহবন্দি করা হয় তাঁদের। গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের আরও বহু রাজনীতিককেই। তাতে নয়া সংযোজন শাহ ফয়জল।