Gujarat Bridge Collapse

‘ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই’ সেতু ছিঁড়ে এত জনের মৃত্যু, আদালতে বললেন অভিযুক্ত সংস্থার ধৃত ম্যানেজার

সেতু ভাঙার পর থেকেই ‘ওরেভা’ সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সেটি আদপে একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা। প্রশ্ন উঠছে, এ রকম সংস্থাকে কী করে সেতু সংস্কারের বরাত দিল প্রশাসন?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

গান্ধীনগর শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৪:১৬
Share:

সেতু বিপর্যয়ের ঘটনায় এখনও নিখোঁজ অনেকে। ছবি: রয়টার্স।

ভগবানের ইচ্ছাতেই নাকি গুজরাতের মোরবীর সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের! আদালতে এমনটাই মন্তব্য করলেন এই ঘটনায় অভিযুক্ত ‘ওরেভা’ সংস্থার গ্রেফতার হওয়া ম্যানেজার। সেতু বিপর্যয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার দুই ম্যানেজার-সহ ন’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার তাঁদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে হাজির করানো হয়। সেখানেই ওই মন্তব্য করেন ধৃত ম্যানেজার দীপক পারেখ। মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক এম জে খানকে তিনি বলেন, ‘‘এই সেতু বিপর্যয় ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়েছে। ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল বলেই এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে।’’

Advertisement

সেতু ভাঙার পর থেকেই সংস্থাটির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর এই অভিযোগও উঠে এসেছে যে, সেতুর মেঝে সংস্কার করা হলেও সেতুর দেড়’শ বছরের পুরনো ধাতব তারগুলি পাল্টানো হয়নি। সেতুর মেঝেতে চার-স্তরযুক্ত অ্যালুমিনিয়ামের চাদর চাপানো হয়েছিল। যার ফলে সেতুর ওজন আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়। আর তার উপর আবার রবিবার সেতুর উপর বহু মানুষের সমাগম হওয়ায় তারগুলি মানুষ-সহ সেতুর বাড়তি ওজন নিতে পারেনি। দর্শনার্থীদের ভিড়ে মাচ্ছু নদীর উপরে ছিঁড়ে পড়ে যায় সেতুটি।

প্রাথমিক তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে যে, ‘ওরেভা’ সংস্থাকে সেতু সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা অখ্যাত এক ঠিকাদারকে কম টাকার বিনিময়ে সেই কাজের বরাত দিয়ে দিয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, যে ঠিকাদারের সংস্থাকে ওই সেতু সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা ওই ধরনের কাজের জন্য যোগ্য ছিল না। তা সত্ত্বেও এই ঠিকাদার সংস্থাকে ২০০৭ এবং ২০২২ সালে সেতু সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলেও আদালতে মামলাকারী আইনজীবী জানিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্ত শেষে বুধবার আদালতকে এই সব তথ্যই জানান মোরবীর ডিএসপি পি এ জালা।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ‘ওরেভা’ আদপে একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা। মার্চ মাসে মোরবী পুরসভার সঙ্গে সেতু সংস্কারের চুক্তি করেছিল এই সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছে, একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাকে কী করে সেতু সংস্কারের বরাত দিল প্রশাসন?

রবিবার সন্ধ্যায় গুজরাতের মোরবী শহরে মাচ্ছু নদীর উপর একটি ঝুলন্ত সেতুতে জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর দর্শনার্থী। অতিরিক্ত ভার রাখতে না পেরে নদীর উপর ভেঙে পড়ে ব্রিটিশ আমলের তৈরি সেতুটি। ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৪১ জনের। এখনও নিখোঁজ অনেকে। ওই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সংস্থায় কর্মরত ন’জনকে গ্রেফতার করেছে। প্রথমে সংস্থার দুই ম্যানেজার এবং সেতু মেরামতকারী দুই ঠিকাদারকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের আগামী শনিবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। পরে এক জন নিরাপত্তারক্ষী এবং এক কর্মী-সহ আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই পাঁচ জনকে আপাতত জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে।

ঘটনাচক্রে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত সফর চলার সময়েই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আহতদের দেখতে মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘যারা দোষী, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।’’ অদূর ভবিষ্যতে গুজরাতে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। সেই ভোটের আগে সেতু বিপর্যয়ের ঘটনায় খানিকটা ‘অস্বস্তি’তেই গুজরাতের বিজেপি সরকার। দেশের পাশাপাশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও ওই ঘটনা নিয়ে লেখালেখি চলছে। তার মধ্যেই সেতু বিপর্যয় ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা’য় মন্তব্য আরও ‘অস্বস্তি’ তৈরি করতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement