বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বাহিনী গড়ছেন যোগী আদিত্যনাথ— ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশে নয়া পুলিশ আইন চালু করতে চলেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এই উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছে নয়া বাহিনীও। এই আইন কার্যকরী হলে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের নয়া ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’ (এসএসএফ) কোনও পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি অভিযান চালাতে পারবে। এমনকি, সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারও করতে পারবে।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার চলতি বাদল অধিবেশনেই পাশ হয়েছে, ‘উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বিল-২০২০’। রবিবার রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র) অবনীশকুমার অবস্থি জানিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া আইন অনুযায়ী গঠিত এসএসএফ বাহিনীর হাতে ওই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই যোগী সরকারের এই উদ্যোগ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নয়া বাহিনী গড়ে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার উদ্যোগকে ভারতীয় সংবিধানের ভাবধারার বিরোধী বলে মনে করছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, এই উদ্যোগ কার্যকর হলে নাগরিক অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের ধাঁচেই বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন এসএসএফ বাহিনীকে রাজ্যের সরকারি প্রতিষ্ঠান, আদালত, বিমানবন্দর, মেট্রো রেল, ব্যাঙ্ক, বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। অবনীশ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘এই বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার জন্য আগামী পুলিশ বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি বা পরোয়ানা ছাড়াই কোনও ঠিকানায় তল্লাশি বা কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে এই বাহিনী।’’ ১৯৬৮ সালের সিআইএসএফ আইনের ১১ এবং ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সম্ভাব্য অপরাধ ঠেকাতে একই ধরনের পদক্ষেপের ক্ষমতা রয়েছে ওই কেন্দ্রীয় বাহিনীর।
আরও পড়ুন: কোদালের কোপে নিকেশ মা কেউটে, ডিম ফুটিয়ে শিশুদের ‘পুনর্বাসন’ হুগলিতে
উত্তরপ্রদেশ স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ১৭৪৭ কোটি টাকা খরচ করে আটটি এসএসএফ ব্যাটালিয়ন গড়া হবে। রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ‘প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্টেবুলারি’ (পিএসি) থেকে নেওয়া হবে প্রায় ১০ হাজার অফিসার ও জওয়ান। আগামী তিন মাসের মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করবে এসএসএফের প্রথম ব্যাটালিয়ন। অবনীশ জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশের ডিজিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে নয়া বাহিনীর রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত আইনি বন্দোবস্ত বলবৎ করা হবে।
আরও পড়ুন: মোদী-মমতা-সনিয়া থেকে তেন্ডুলকর, সবার উপর গোপন নজরদারি চিনের!
ইলাহাবাদ হাইকোর্ট সম্প্রতি রাজ্যের আদালতগুলির নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বাহিনী গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলার পরেই এসএসএফ প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয় যোগী আদিত্যনাথ সরকার। কিন্তু অতীত এবং সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে সাজানো সংঘর্ষে খুন-সহ নানা বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে নয়া বাহিনী গঠন এবং আইন বলবৎ হলে যোগীর রাজ্যে ‘পুলিশ রাজ’ কায়েম হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রাক্তন কর্তা পঙ্কজ দত্ত এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘এটি এক ধরনের সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ। ভারতের সংবিধান নাগরিকদের যে অধিকার দিয়েছে, যে রক্ষাকবচ দিয়েছে তা হরণ করবে এই আইন।” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন,‘‘কোনও সরকার যদি এ ধরনের আইন প্রণয়ন করে, তবে ধরে নিতে হবে সেই সরকারের কোনও অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।” তিনি আরও বলেন,‘‘কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের আইন থাকতে পারে না। এই আইন চালু হলে জরুরি অবস্থার মতোই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”