কাজ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, সততা প্রশ্নাতীত, মোদী প্রসঙ্গে রাজনাথ

এত দিন নাগাড়ে বলছিলেন নিতিন গডকড়ী। যা অস্বস্তি বাড়াচ্ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং বিজেপির। এ বার মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৭
Share:

রাজনাথ সিংহ।

এত দিন নাগাড়ে বলছিলেন নিতিন গডকড়ী। যা অস্বস্তি বাড়াচ্ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং বিজেপির। এ বার মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তাঁর মতে, মোদীর সততা প্রশ্নাতীত। কিন্তু তিনি বেশি কিছু কাজ করেননি এমন অভিযোগ কেউ করতেই পারেন। বিরোধীদের মতে, প্রশংসার মোড়কে মোদীকে সূক্ষ্ম খোঁচাই দিয়েছেন তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Advertisement

পটনায় গত কাল বিশিষ্টজনেদের একটি সভায় বক্তৃতা দেন রাজনাথ। তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে মোদীকে চিনি। তাঁর সঙ্গে কাজও করেছি। কেউ একজন অভিযোগ করতেই পারেন, মোদী বেশি কাজ করেননি। কিন্তু তাঁর সততা এবং সংকল্প নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না।’’ রাফাল প্রশ্নে রাহুল গাঁধীর সমালোচনা করতে ছাড়েননি রাজনাথ।

বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণ অনুযায়ী, রাজনাথ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি (সেকেন্ড ম্যান) নন। ফলে তাঁর ক্ষোভ রয়েছে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, কয়েক মাস বাদেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে মোদীর কাজের উদাহরণ টেনে রাজনাথের মন্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। গত এক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী দাবি করছেন, তাঁর আমলে যা কাজ হয়েছে কংগ্রেস জমানায় তা হয়নি। সম্প্রতি মোদী বলতে শুরু করেছেন, ৫৫ বছর দেশে যে কাজ হয়েছে, তার বেশি কাজ হয়েছে তাঁর ৫৫ মাসের প্রধানমন্ত্রিত্বে। বিরোধীরা বলছেন, যে কাজ নিয়ে মোদী এত বড়াই, সেই কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রিয়ঙ্কার নামে চাঙ্গা লখনউ

মোদীর অস্বস্তি বাড়াতে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্দরে তাঁর বিরোধীদের প্রশংসা শুরু করেছে বিরোধীরা। দিন কয়েক আগে রাহুল এবং সনিয়া গঁধী কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী গডকড়ীর প্রশংসা করেছিলেন। এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে গত কাল বলেন, ‘‘গডকড়ী আমার বন্ধু। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে তাঁর নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেই কারণে তাঁর (গডকড়ী) জন্য আমি চিন্তিত।’’ এর বেশি অবশ্য কিছু বলেননি পওয়ার।

রাজনাথের মতোই গডকড়ীও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নন। হিন্দি বলয়ে বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে বিজেপির পরাজয়ের পরে কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, ‘‘যে সব নেতা স্বপ্ন দেখান তাঁদের মানুষ পছন্দ করেন। কিন্তু স্বপ্নপূরণ না হলে সেই নেতাদের মানুষ মারধর করেন।’’ এতে পরোক্ষে মোদীকেই খোঁচা দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি বিরোধীদের। প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধীরা যখন রাফাল-কাণ্ড এবং কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে লাগাতার নিশানা করছেন, তখন আবার গডকড়ী বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা বাড়ির খেয়াল রাখতে পারেন না, তাঁরা দেশ সামলাতে পারবেন না।’’ কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরে কংগ্রেস সভাপতি টুইট করেছিলেন, ‘‘গডকড়ীজিকে অভিনন্দন। বিজেপিতে এমন সাহস এক মাত্র আপনারই আছে। রাফাল দুর্নীতি ও অনিল অম্বানী, কৃষকদের দুর্দশা এবং প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা নিয়েও বলুন।’’ গত সপ্তাহে লোকসভায় গডকড়ীর বক্তব্যের পরে টেবিল চাপড়ে অভিনন্দন জানাতে দেখা যায় সনিয়া গাঁধী, মল্লিকার্জুন খড়্গদের।

রাজধানীর রাজনৈতিক শিবিরে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে, আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠতে পারে গডকড়ীর নাম। তাছাড়া দেশের প্রায় সব বিরোধী দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যথেষ্ট মসৃণ। প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির অনুষ্ঠানে রাহুলের সঙ্গে তাঁকে খোশমেজাজে গল্প করতেও দেখা গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে রাজনাথের মন্তব্য মোদীর অস্বস্তি আরও বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement